অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিহারের জাতিগত গণনার ফল নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর, বিজেপির যোগদান নিয়ে সংশয়


ভারতের বিহারের কাস্ট সেন্সাস বা জাতিগত গণনার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ২ অক্টোবর ২০২৩।
ভারতের বিহারের কাস্ট সেন্সাস বা জাতিগত গণনার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ২ অক্টোবর ২০২৩।

সোমবার ২ অক্টোবর ভারতীয় সময় দুপুরে প্রকাশিত হয়েছে ভারতের বিহারের বহু আলোচিত কাস্ট সেন্সাস বা জাতিগত গণনার ফলাফল। মঙ্গলবার ৩ অক্টোবর তা নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার।

বিহারের জাতিগত গণনায় জানা গিয়েছে, বিহারে ১৩ কোটি মানুষের ৬৩ শতাংশই অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণি বা ওবিসি-ভুক্ত। তাদের মধ্যে আবার ৩৬ শতাংশ হল অতি পিছিয়ে পড়া বা এক্সট্রিম ব্যকওয়ার্ড শ্রেণি (ইবিসি) ভুক্ত। পশ্চাৎপদ বা ব্যাকওয়ার্ড ২৭.১ শতাংশ। প্রথম ভাগের মধ্যে আছে নীতীশ কুমারের স্বজাতি কুর্মি সম্প্রদায়। অন্যদিকে, বাকি ২৭.১ শতাংশের মধ্যে ১৪ শতাংশই হল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের যাদব সম্প্রদায়ের মানুষ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিহারের রাজনীতিতে লালুপ্রসাদ যেমন যাদবদের সামনে রেখে রাজনীতিতে মাথা তুলেছেন, তেমনই নীতীশের উত্থানের পিছনে আছে তার স্বজাতি কুর্মি এবং অন্যান্য ইবিসি-ভুক্ত সম্প্রদায়গুলি। বস্তুত বিহারের রাজনীতিতে ইবিসি রাজনীতির পুরোধা মানা হয় নীতীশকে। মধ্যবর্গীয় যাদবদের মোকাবিলায় কুর্মি-সহ অতি পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেররা নীতীশকেই নেতৃস্থানীয় মনে করেন।

বিহারের জাতিগত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ভারতের অন্য রাজ্যেও ইবিসি নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। সব দলের নেতারাই মনে করছেন, ওবিসি-দের মধ্যে ইবিসি-রা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ভোটের অঙ্কে এই সম্প্রদায়কে কাছে টানা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকসভা ভোটের মাস ছয়েক আগে বিহারে জাতি গণনার ফলাফল এক প্রকার চোখ খুলে দিয়েছে বিজেপি বিরোধী দলগুলির। শুরু হয়েছে কৃতিত্ব দাবিও।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ সোমবার ২ অক্টোবর মনমোহন সরকারের সময়ে হওয়া আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে দাবি করেছেন, ইউপিএ সরকারই এই ব্যাপারে প্রথম সকলের চোখ খুলে দিয়েছিল। ২০১২-১৩ সালে হওয়া সেই সমীক্ষা রিপোর্ট নরেন্দ্র মোদী সরকার পুরোটা প্রকাশ না করায় বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন রমেশ।

মনমোহন সরকারকে ওই সমীক্ষা করাতে চাপ দিয়েছিলেন ইউপিএ সরকারের দুই শরিক নেতা লালুপ্রসাদ যাদব এবং মুলায়ম সিং যাদব। সোমবার বিহারের কাস্ট সেন্সাস-এর ফল প্রকাশের পর তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন লালুপ্রসাদ পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং প্রয়াত মুলায়ম সিং যাদবের পুত্র সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব। অন্যদিকে, তামিলনাড়ু সরকার দাবি করেছে তারা অনেক আগে থেকেই ওবিসি কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার বিহারের ফল ঘোষণার আগেই কাস্ট সেন্সাস-এর সিদ্ধান্ত জানিয়ে রেখেছে।

বিহারের রাজনৈতিক মহলের খবর, ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি ওবিসি নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করা শুরু করায় নীতীশও তৎপর হয়ে উঠেছেন। ওবিসি সংরক্ষণের মাত্রা বৃদ্ধির দাবি ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে অনুমান করেই তিনি এই ব্যাপারে বাড়তি তৎপরতা নিতে শুরু করেছেন। এখন ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি ও শিক্ষায় ওবিসি-দের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ চালু আছে। বিভিন্ন রাজ্যে এর পরিমাণ ভিন্ন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার ৩ অক্টোবর দাবি তুলেছেন, ওবিসি-দের সংরক্ষণ বাড়াতে হবে। ভারত সরকার এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও এই ব্যাপারে মুখ খোলেনি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, লক্ষণীয় হল নীতীশের তৎপরতা। মঙ্গলবার সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি জাতিগত গণনার রিপোর্ট নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা সেরে নিতে চান। বৈঠকে বিরোধী দল বিজেপি যোগ দেবে কিনা এখনও স্পষ্ট নয়। বিজেপি জাতিগত গণনায় সায় দিলেও পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংবাদ সূত্রের খবর, নীতীশের উদ্দেশ্য জাতি গণনার রিপোর্টকে সামনে রেখে ইন্ডিয়া জোটের অঘোষিত মুখ হয়ে ওঠা। ভোটের আগে কাউকেই জোটের মুখ করা হবে না সিদ্ধান্ত হওয়াতেই নীতীশ কাস্ট সেন্সাস রিপোর্টকে সামনে রেখে প্রচারে থাকতে চাইছেন। ইতিমধ্যে জনতা দল ইউনাইটেড নীতীশকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে তুলে ধরা শুরু করেছে। দলের দাবি, নীতীশই ইন্ডিয়া জোটের হাতে বিজেপিকে ঘায়েল করার সবচেয়ে বড় অস্ত্রটি তুলে দিয়েছেন।

XS
SM
MD
LG