পূর্ব ভারতের রাজ্য অসমের বাংলাভাষী মুসলিমদের নতুন করে নিশানা করেছেন বিজেপি শাসিত সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। "আগামী দশ বছর মিঁঞাদের ভোট চাই না" বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, "মিঁঞারা আমার নামে, প্রধানমন্ত্রীর নামে, বিজেপির নামে জয়ধ্বনি দিতে পারে। আমরা তাদের জন্য কাজ করব। কিন্তু নির্বাচন এলে আমিই তাদের অনুরোধ করব, তোমাদের ভোট চাই না।" হিমন্তের ঘোষণা, "মিঁঞাদের ভোট তখন চাইব যখন তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি অনুসরণ করবে, কম বয়সে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়া বন্ধ করবে এবং মৌলবাদী কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকবে।"
উল্লেখ্য, অসম রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর নানাভাবে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিরোধী মহলে। এনআরসি চালু করে সেখানকার কয়েক লাখ বাঙালিকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। সেই তালিকায় সিংহভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক মেরুকরণের লক্ষ্যে এই রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জন্মকালে শিশুমৃত্যুর দায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর চাপিয়েছে অসম সরকার।
হিমন্ত প্রশাসনের বক্তব্য, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে। জন্মকালে শিশুমৃত্যুর হার সেই কারণে বেশি। আর এই সমস্যা সংখ্যালঘুদের মধ্যে বেশি। মাস ছয়েক আগে রাজ্য পুলিশ অভিযান চালিয়ে অল্প বয়সী বা নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে করার অভিযোগে দু হাজারের বেশি পুরুষকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম।
অসমে জঙ্গি নাশকতার ঘটনাতেও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সংখ্যালঘুদের নিশানা করা হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। অন্যদিকে, হিমন্ত সরকারের অভিযোগ, রাজ্যের বহু মাদ্রাসা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
রবিবার ১ অক্টোবর গুয়াহাটিতে মিঁঞাদের সম্পর্কে হিমন্তের বক্তব্য ঘিরে নতুন করে শুধু অসম নয় দেশের রাজনীতিতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সাধারণভাবে মিঁঞা বা মিয়া হল মুসলিম উচ্চ পদস্থ সামাজিক ব্যক্তিকে সম্বোধন করার জন্য ব্যবহৃত সম্ভ্রম সূচক শব্দ। তবে অসমে মূলত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এলাকায় নদীর চরে বসবাসকারী বাংলাভাষী মুসলিমদের মিঁঞা বলা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি অসমে পেটের অসুখের সমস্যার জন্যও রাজ্যের বিজেপি শিবির চর এলাকার বাসিন্দাদের নিশানা করেছে। চর এলাকায় বসবাসীকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপুল অংশের মানুষ শাক-সবজি চাষ করে দিনযাপন করেন। বিজেপি নেতাদের একাংশের অভিযোগ, ওই এলাকায় সবজি চাষে রাসায়নিক বা কেমিক্যাল সার ব্যবহারের ফলে পেটের অসুখ বাড়ছে অসমে। কয়েক মাস আগে অসমে সব্জির মূল্যবৃদ্ধির জন্যও সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত কৃষিজীবী ও সব্জি বিক্রেতাদের দায়ী করেছিলেন।