ভারতের পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের মেঘ ঘনিয়েছে। ধীরে ধীরে এই নিম্নচাপ গভীর হচ্ছে। সাগর থেকে জলীয় বাষ্প টেনে তা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। সোমবার পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দফতর তাদের আবহাওয়া রিপোর্টে জানিয়েছে, ৫ তারিখ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হবে। একটানা বৃষ্টিতে বন্যার সতর্কতা জারি হয়েছে রাজ্যের সাত জেলায়।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, দক্ষিণবঙ্গের চারটি জেলায় বুধবার ৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। এ ছাড়া বুধবার পুরুলিয়া, বাঁকুড়াতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে তুমুল বৃষ্টি চলবে শুক্রবার ৬ অক্টোবর পর্যন্ত।
এই মুহূর্তে নিম্নচাপ দক্ষিণ-পূর্ব ঝাড়খণ্ড ও সংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর অবস্থান করছে। ক্রমশ অভিমুখ বদলে উত্তর প্রদেশের দিকে সরে যাবে। নিম্নচাপ এলাকা থেকে উত্তর প্রদেশ অবধি বৃষ্টি অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা বিদায়ের পালা এসেছে। তবে তার আগে ফের একবার ফুঁসে উঠেছে নিম্নচাপের মেঘ। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে আগামী কয়েক দিন। নিম্নচাপের জেরে সমুদ্র ফুঁসছে। উপকূলের জেলাগুলিতে বাড়তি সতর্কতা জারি হয়েছে। এদিকে বৃষ্টি অক্ষরেখার জেরে উত্তর-পশ্চিম ভারতের কয়েকটি রাজ্য, গুজরাত ও মধ্য প্রদেশের কিছু অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে আগামী কয়েকদিন।
টানা বৃষ্টিতে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলা পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলিতে বন্যার সতর্কতা জারি হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে নবান্নে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সংশ্লিষ্ট সাত জেলার জেলাশাসক, পুলিশ আধিকারিক, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। পরিস্থিতি সামলাতে কী করণীয় তা বিস্তারিত আলোচনা হবে বৈঠকে। প্রয়োজনে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল মানুষজন। উত্তরবঙ্গেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এদিকে বৃষ্টিতে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে যথাক্রমে ৬০ হাজার কিউসেক এবং ৭৩ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। বৃষ্টি চলতে থাকলে আগামী দিনে আরও জল ছাড়তে হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিভিসি আধিকারিক অপূর্ব সাহা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সমুদ্রের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ক্রমশ স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে। বাংলা ও ওড়িশার উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে নিম্নচাপের প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করা হয়েছে। দুর্যোগের মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বৃষ্টিতে জেলাগুলির পরিস্থিতি কেমন তা প্রতি পাঁচ ঘণ্টা অন্তর রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।