অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের কৃতিত্ব নিজের বলে পরোক্ষে দাবি প্রধানমন্ত্রী মোদীর


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

ভারতে কেন্দ্রের ডাকা সংসদের বিশেষ অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়ে গিয়েছে। বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর লোকসভা এবং বৃহস্পতিবার ২১ সেপ্টেম্বর বেশি রাতে রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয়।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৎক্ষনাৎ বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বিলকে তিনি লোকসভা ভোটের প্রচারে তার সরকারের কৃতিত্ব বলে দাবি করতে চলেছেন। শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর সেটাই করলেন তিনি দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় দফতরে।

বিজেপি শিবির শুক্রবার মহিলা বিল উদযাপনের কর্মসূচি নিয়েছে। সারা দেশে দল এই বিল পাশের কৃতিত্ব দাবি করতে সভা, মিছিল ইত্যাদি করবে। এছাড়া সমাজমাধ্যমে প্রচার তো আছেই।

আসলে সংসদের বিতর্কে আরজেডি, সমাজবাদী পার্টির মতো কয়েকটি দল বাদে বাকিরা মহিলা বিল পাশে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করে। সনিয়া গান্ধী বলেন, "মহিলাদের জন্য লোকসভা, বিধানসভায় আসন সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে আমার প্রয়াত জীবনসঙ্গীর স্বপ্ন পূরণ হবে।" কংগ্রেস নেত্রী দাবি করেন, রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রথম এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

তৃণমূল মহিলা বিল পাশের বিশেষ কৃতিত্ব দিয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতা এই ব্যাপারে সংসদে সরব হওয়ার পাশাপাশি দলে এবং সরকারে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব অনেকটাই বাড়িয়েছেন। তৃণমূলের দুই বক্তা লোকসভায় কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রাজ্যসভায় ডেরেক ও ব্রায়েন বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, "মহিলা বিল পাশ করানোর কৃতিত্ব দাবি করার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দলে ও মন্ত্রিসভায় মহিলাদের ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে দেখান।"

পরিস্থিতিতে নিজেদের কৃতিত্ব তুলে ধরতে শুক্রবার থেকেই প্রচার শুরু করে বিজেপি। আর তাতে নেতৃত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার দলীয় দফতরে বিল পাশে কৃতিত্ব দাবি করে বিরোধীদের নিশানা করেন। বলেন, "সংসদে যারা একদিন মহিলা বিল ছিঁড়ে ফেলেছিল তারাই এখন তা নিয়ে মাতামাতি করতে চাইছে।"

প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে ২০১০ সালে মহিলা বিল রাজ্যসভায় আটকে যাওয়ার ঘটনাটির উল্লেখ করতে চেয়েছেন। মনমোহন সিং সরকারের সময় ইউপিএ সরকার বিল পেশ করেও রাজ্যসভায় তা পাশ করায়নি শরিক দলের আপত্তিতে। রাজ্যসভায় বিল পেশ হওয়া মাত্র সমাজবাদী পার্টির এক সাংসদ সেটির কপি ছিঁড়ে ফেলেন। পরে সরকার বিলটি সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে দেয়।

রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সেই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ১৯৯৬ থেকে ২০২৩, কেন ২৭ বছর লাগল বিলটি পাশ করাতে প্রচারে তা তুলে ধরবে বিজেপি। লোকসভায় বিলটি পেশ হওয়ার পর পরই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, "ঈশ্বর বোধহয় আমার হাত দিয়েই বিলটি পাশ করানোর জন্য বরাদ্দ রেখেছিলেন।"

দলীয় দফতরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আজ, আমি দেশের সকল নারীকে অভিনন্দন জানাই। গতকাল এবং পরশু আমরা একটি নতুন ইতিহাস রচনার সাক্ষী হয়েছি। এটা আমাদের সৌভাগ্য যে কোটি কোটি মানুষ আমাদের সেই ইতিহাস তৈরি করার সুযোগ দিয়েছেন।"

প্রধানমন্ত্রীর আগে বিজেপি সভাপতি মোদী সরকারের নারী কল্যাণ প্রকল্পগুলি তুলে ধরে দাবি করেন, বিজেপি মহিলাদের অধিকারের বিষয়ে কতটা আন্তরিক। তিনি বলেন, "সংসদে মহিলা বিল পাশ ইতিহাসের একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে।"

XS
SM
MD
LG