ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান দাবি করছে দেশে মোট উৎপাদন বাড়ছে। অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয়দের সঞ্চয় ক্রমশ কমে তলানিতে এসে ঠেকেছে। গত পাঁচ বছরে যা সর্বনিম্ন।
অর্থাৎ মানুষের রোজগার বাড়ছে না। বরং কাজের অভাব প্রবল। তার উপর অনবরত বাড়ছে সংসার চালানোর খরচ। ফলে সঞ্চয়ের জন্য আর উদ্বৃত্ত কিছু থাকছে না। অথচ উল্লেখ্য স্বল্প সঞ্চয়ে বরাবরই এগিয়ে ছিল ভারত।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর হিসেব অনুযায়ী ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে দেশের মোট পারিবারিক সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৩ লক্ষ ৭৭ হাজার কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তার আগের আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ সালের তুলনায় যা ১৬ লক্ষ ৯৬ হাজার কোটি কম। শতকরা হিসেবে ভারতীয়রা ১৯ শতাংশ কম সঞ্চয় করেছেন।
২০২০-২১ আর্থিক বছরে দেশে পরিবারগত সঞ্চিত সম্পদের মোট পরিমাণ ছিল ২২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সেটাই এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গেছে।
২০২১-২২ আর্থিক বছরে দেশের মানুষের ধারদেনার বার্ষিক হার ছিল জিডিপির ৩.৮ শতাংশ। কিন্তু কোভিড কেটে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে তা ৫.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ সঞ্চয় কমার পাশাপাশি ধারদেনাও বাড়ছে। স্বাধীনতার পর এর আগে কেবল মাত্র একটি আর্থিক বছরে দেশের মানুষের ধারদেনা এই হারে বেড়েছিল। ২০০৬-০৭ আর্থিক বছরে তা পৌঁছেছিল ৬.৭ শতাংশে।
দেশের মোট উৎপাদনের নিরিখে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ভারতের নাগরিকদের মোট আর্থিক সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৭.২ শতাংশ। তা কমে গত আর্থিক বছরে ৫.১ শতাংশে পৌঁছেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ধারদেনার বহরও ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে বেড়ে গিয়ে জিডিপির ৩৭.৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে ভারতে নরেন্দ্র মোদী জমানায় গত আট বছরে সারা দেশে প্রকৃত রোজগার সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এই দুই খাতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ২০২১ সালে দেশে চিকিৎসা খাতে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১২ শতাংশ, এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে তা ছিল সর্বাধিক। কিন্তু গত পাঁচ বছরে চিকিৎসা বাবদ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে খরচ ১১ থেকে ১২ শতাংশ বেড়ে গেছে। তাই সঞ্চয়ে টান পড়েছে, ধারদেনা বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ মহল।
এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও উদ্বেগের বিষয় হল, এর থেকে সুরাহার তেমন ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।