কানাডার পর তুরস্ক, ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলল এই দেশ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় প্রদত্ত ভাষণে আচমকাই কাশ্মীর নিয়ে সরব হয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোগান। ভাষণে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা দূর করতে কাশ্মীরে ন্যায়ের পথে শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরি।
সদ্যই অনন্তনাগে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতীয় সেনা ও জন্মু-কাশ্মীর পুলিশের পাঁচ দিনের লড়াই শেষ হয়েছে। সেনা জঙ্গি সংঘর্ষে অফিসার ও জওয়ান মিলিয়ে চার জন নিহত হয়েছেন। সেনার গুলিতে প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েকজন জঙ্গির। কিন্তু তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এমন সময় জাতিসংঘের ভাষণে কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে আনায় ভারতের কূটনৈতিক মহল বিস্মিত।
কাশ্মীর নিয়ে তুরস্কের অবস্থান অবশ্য নতুন নয়। এর আগে তুরস্কের পক্ষ থেকে কাশ্মীরকে জেলখানার সঙ্গে তুলনা টেনে বলা হয়েছিল, সেখানকার ৮৯ লাখ বাসিন্দার রাজ্যের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এরদোগান এবার বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন বিবাদ চলছে। আর বিবাদ না বাড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা দরকার। কূটনৈতিক মহল মনে করে, এই পরামর্শমূলক বক্তব্যও আসলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্র মধুর বলেই কূটনৈতিক মহলের খবর। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ দু’জনের কার্যধারাতেও বেশ মিল। নরেন্দ্র মোদীর মতো এরদোগানও তার দেশে জাতীয়তাবাদকেই প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার করেছেন, মোদীর মতো তার বিরুদ্ধেও দেশের বিরোধী নেতা-নেত্রীদের কণ্ঠরোধ, এজেন্সি দিয়ে হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে, যে কারণে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে মোদী ও এরদোগানকে এক করে দেখানো হয়। নতুন করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এসেছিলেন তিনি।
তবে এরদোগান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের সদস্য পদের দাবিকে সমর্থন করেছেন। বলেন, কেন মাত্র পাঁচটি দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য) হাতে গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার ভার থাকবে।
সদ্য নিজের দেশে বিপুল ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় ফেরা এরদোগান-এর কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলার পিছনের কূটনীতি এবং কৌশল বোঝার চেষ্টা করছে নয়া দিল্লি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে এসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, অসামরিক বিমান চলাচল এবং জাহাজ চলাচলের মতো সম্ভাবনাময় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি স্থান পায়।
জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতির দায়িত্ব ভারত সফলভাবে পালন করায় এরদোগান ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কে ভূমিকম্পের পর দ্রুত ত্রাণ পাঠানো এবং ‘অপারেশন দোস্ত’–এর মাধ্যমে উদ্ধার কার্যে সহায়তার জন্য তিনি ভারতকে ধন্যবাদ জানান।