ভারতে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে নরেন্দ্র মোদী সরকার মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করেছে। সোমবার ১৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠকে বিলটি চলতি অধিবেশনে পাশ করানোর সিদ্ধান্ত হয়। তারপরই রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, যে কারণে বিগত ২৭ বছর যাবৎ বিলটি পাশ করানো যায়নি সেই মৌলিক বিরোধের কি সমাধান সূত্র থাকবে নয়া বিলে, তাই ঘিরে। অর্থাৎ বিজেপির একাংশ-সহ বিভিন্ন দলের দাবি মতো বিলে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে ওবিসি, এসসি অর্থাৎ তফসিলি জাতি এবং এসটি বা তফসিলি উপজাতিদের জন্য কোটা থাকবে কি না তাই নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপির একাংশের বক্তব্য, আগের বিলটি হুবহু পাশ করালে মোদী সরকার আলাদা করে কোনও কৃতিত্ব দাবি করতে পারবে না। কারণ বিলটি পাশ করানো নিয়ে কংগ্রেস-সহ প্রথম সারির দলগুলির কোনও আপত্তি নেই। কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী কয়েক দিন আগেও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিলটি পাশ করানোর অনুরোধ করেছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী সব মিলিয়ে এই ইস্যুতে মোদীকে ছয়টি চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি নানা সময় সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহিলা বিল নিয়ে সংসদে তার লড়াই একটা সময়ে গোটা দেশ দেখেছিল। ফলে লোকসভা ভোটের প্রচারে মহিলা বিল পাশ করানোর কৃতিত্ব বিজেপি একা দাবি করতে পারবে না।
বিজেপি সূত্রের খবর, নরেন্দ্র মোদী এই কারণেই মহিলাদের জন্য যে ১৮১টি আসন সংরক্ষিত হতে যাচ্ছে তার মধ্যে ওবিসি, এসসি এবং এসটি সম্প্রদায়ের জন্য কোটা বরাদ্দ করতে পারেন। লালু প্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমার, মায়াবতী, বিজেপির উমা ভারতীরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপিও মোদী জমানায় দলিত, আদিবাসী এবং ওবিসি ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তাই লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী মহিলাদের পাশাপাশি জাতিগত সম্প্রদায়কেও খুশি করার পথে হাঁটতে পারেন, এমনটাই জানা যাচ্ছে বিজেপি শিবির থেকে।
তবে মহিলাদের আসনে জাতিগত কোটা চালু করার আগে সংসদ এবং বিধানসভা, বিধান পরিষদের আসনে ওবিসি সংরক্ষণ চালু করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। বিজেপি শিবিরের খবর, লোকসভা ভোটের আগে চলতি সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী মাস্টার্স স্ট্রোক দিতে পারেন সংসদে ওবিসি সংরক্ষণ চালু করে।
নরসিংহ রাও সরকার ১৯৯১-এ সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪ তম সংশোধনী এলে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। এখন পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্যেই সেই সংরক্ষণের পরিমাণ ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রশাসনিক নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্যে চালু হয়েছে ওবিসি সংরক্ষণও। এ বছরের গোড়ায় উত্তর প্রদেশ সরকার প্রশাসনিক নির্দেশ বলেই পঞ্চায়েত ও পুরলভায় ওবিসি সংরক্ষণ চালু করে। যদিও তারজন্য অনেক আইনি বাধার মুখে পড়তে হয়। বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, সংসদে বিল পাশ করিয়ে রাজ্যসভা লোকসভা, বিধানসভা এবং বিধান পরিষদে ওবিসি কোটা চালু হলে আইনি বাধা দূর হবে। মহিলাদেরও জাতিগত সংরক্ষণ দিতে সমস্যা হবে না।
বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকে কাবু করতে মোদী সরকার এই পদক্ষেপ করতে পারে বলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের খবর। ইন্ডিয়া জোট জাতিগত গণনার ব্যাপারে একপ্রকার সহমত হয়েছে। দলিত, জনজাতি এবং অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির যথেষ্ট আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়নি দাবি করে জোটের বেশির ভাগ দল এই গণনায় সায় দিয়েছে, যা মোদী সরকার মানতে নারাজ। কিন্তু মোদী সরকার ওবিসি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে ইন্ডিয়া জোটের দলিত, জনজাতি, ওবিসি রাজনীতি বড় ধাক্কা খাবে, কোনও সন্দেহ নেই, এমনই মত পর্যবেক্ষকদের।