ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে স্পেন সফর করছেন। আর সেই সফরেই বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সময়ের রাত ১১টা নাগাদ কলকাতা তথা বাংলার ফুটবলের জন্য এক বড় সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল। স্পেন সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লা লিগার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ার টেবাস-এর সঙ্গে বৈঠক করেন।
এদিন সন্ধেয় কলকাতা তথা বাংলায় ফুটবলের পেশাদারিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে মহানগরীতে একটি ফুটবল আকাডেমি গড়ে তোলার জন্য লা লিগা-র সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি সই করল পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার।
এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বেঙ্গল মিনস বিজনেস। মানুষ যেমন মধুমেহ থাকলেও মিষ্টি না খেয়ে থাকতে পারে না, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গও তাই। বাংলার যে কোনও গ্রামে চলে গেলে একটা ফুটবল অন্তত দেখা যাবেই। দেখা যাবে ছোট ছোট ছেলেরা প্রবল উন্মাদনার সঙ্গে ফুটবল খেলছে।"
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ও লা লিগা-র প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় লা লিগা প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা কলকাতায় আসুন। জমি নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। কোনও কিছু নিয়েই আপনাদের ভাবতে হবে না। সরকার সব রকম সাহায্য করবে। আমাদের শুধু একটাই চাওয়া। যেভাবে আপনারা মেসি-রোনাল্ডো তৈরি করেছেন, তেমনই কলকাতার ছেলেদের মধ্যে থেকেও মেসি, রোনাল্ডো গড়ে তুলুন। ওরা সত্যিই ফুটবল ভালবাসে।”
কলকাতায় লা লিগা-র ফুটবল আকাডেমি গড়ে তুলতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগের তারিফ করেন হ্যাভিয়ার টেবাস। সেই সঙ্গে তাঁরই পৌরোহিত্যে এদিন পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের সঙ্গে লা লিগা-র মউ সাক্ষর হয়।
মউ সাক্ষরের পর আবার নিজে থেকেই মাইক টেনে নেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। কলকাতার তিনটি বড় ক্লাবের কর্মকর্তারা রয়েছে। আমি মিস্টার হ্যাভিয়ার টেবাসকে বলব, আপনারা কলকাতায় আকাডেমি গড়ে তুললে সেখানকার ছেলেদের কলকাতায় ফার্স্ট ডিভিশন লিগে যেন খেলান। সেই অনুমতি যেন সরকার ও কলকাতার ক্লাবগুলি দেয়। আপনি আমার চেয়ে ফুটবল বেশি বোঝেন। আমি মনে করি আকাডেমির ছেলেরা ফার্স্ট ডিভিশনে খেলার সুযোগ পেলে, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেলে, পেশাদারিত্বের বিকাশ হবে।”
তিনি টেবাসকে বলেন, “আপনি কলকাতায় আসুন। দেখবেন, কলকাতায় ফুটবলের আগ্নেয়গিরি রয়েছে, শুধু দরকার স্প্যানিশ ফুটবলের সাহচর্য, সহায়তা। তা হলে সেই দেশে ফুটবলের ফুল ফুটবে।” তাঁর কথায়, “আমি একটা কথা বার বার বলি। তা হল, ফুটবলের বিকাশের জন্য অর্থ ও পরিকাঠামো দরকার ঠিকই। কিন্তু সেই সঙ্গে যেটা চাই সেটা হল স্কিল তথা দক্ষতা। এই কারণেই মাত্র ৮ বছর বয়সে এই শহরে খেলতে এসে মেসি আজকের মেসি হতে পেরেছেন।”
কলকাতা ফুটবলের পরম্পরা ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে গিয়ে সৌরভ বারবার তুলে ধরেছেন তিন নামী ক্লাবের সমর্থকদের আবেগের কথা।
উল্লেখ্য, এই প্রথম মাদ্রিদ সফরে গিয়েছেন তিনি। সে কথা জানিয়ে সৌরভ এদিন বলেন, "আমার স্পেন সফরের সবচেয়ে বড় পাওনা হবে রিয়েল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা। কারণ, ক্রিকেট খেলেছি ঠিকই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমার প্রথম আবেগ ছিল ফুটবলই।"