বুধবার ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকেই দেশে জাতি গণনা নিয়ে প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল। জোটের অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের এই ব্যাপারে আপত্তি আছে, মুম্বইয়ে জোটের তৃতীয় বৈঠকেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাছাড়া, সমন্বয় কমিটির সদস্য তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবারের প্রথম বৈঠকে হাজির থাকতে পারেননি। কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হয়েছিল তাকে। তারপরও ১২ দলের উপস্থিতিতে বৈঠকে জাতি গণনার ব্যাপারে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
বুধবার ইন্ডিয়া জোটের নীতি নির্ধারক সমন্বয় কমিটির বৈঠক বসেছিল রাজধানী দিল্লিতে এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের বাড়িতে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল। তিনি জানান, জাতি গণনার ব্যাপারে বৈঠকে সব দল সহমত হয়েছে।
প্রথম বৈঠকে অভিষেক ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন অনুপস্থিত ছিলেন। সিপিএম এখনও এই কমিটির জন্য দলের কারও নাম জানায়নি। জানা গিয়েছে, দলের আসন্ন পলিটব্যুরোর বৈঠকে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দল। বুধবারের বৈঠকে অভিষেকের প্রসঙ্গ ওঠে। তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইডি, সিবিআই দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক নেতা।
জাতি গণনার মূল প্রস্তাবটি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের। এই ব্যাপারে বিহার সরকারের শরিক আরজেডি এবং কংগ্রেসও সহমত। সম্প্রতি বিহার সরকার রাজ্যে জাতি গণনা বা কাস্ট সেন্সাস করিয়েছে। নীতীশ কুমার-লালু প্রসাদদের বক্তব্য, বিজেপি হিন্দু সম্প্রীতির কথা বলে। কিন্তু হিন্দুদের মধ্যে নিম্নবর্গের মানুষের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতিতে মোদী সরকার আগ্রহী নয়। ব্রাহ্মণ্যবাদী দল বিজেপির রাজত্বে দলিত, ওবিসি, আদিবাসীরাই সবচেয়ে বঞ্চিত। জাতি গণনা হলেই এই ছবি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার ১২ দিনের সফরে স্পেনে গিয়েছেন। বুধবারের বৈঠকে অভিষেকও ছিলেন না। পর্যবেক্ষকদের মতে, এখন দেখার বুধবারের ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা কী বলেন।
সংবাদ সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের বৈঠকে এই প্রসঙ্গে আলোচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, জাতপাতের রাজনীতির হাত ধরেই ধর্মীয় বিবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে। জাতি গণনায় তাই তাৎক্ষণিক সায় দেয়নি তিনি। বস্তুত এই প্রশ্নে মুম্বইয়ের বৈঠকে তার সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, রাজ্যে জাল জাতি সংশাপত্র থাকার বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রীকে বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন সূ্ত্রে খবর, জাল সার্টিফিকেট বাতিলের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি।
তবে তৃণমূলের আপত্তি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্ন মতও আছে। তা হল, পশ্চিমবঙ্গে জাত বিভাজন থাকলেও তা কখনও রাজনীতির মূল অভিমুখ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলই জাতপাতের রাজনীতিতে পারদর্শী নয়। জাত ভিত্তিক সামাজিক সমীকরণের রাজনীতিতে অভ্যস্ত নন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকেরা। ফলে জাতি গণনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনীতি তৃণমূলের ক্ষতিও ডেকে আনতে পারে।