ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘরোয়া রাজনীতিতেও বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছিল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলে। আগামী বছর লোকসভা ভোট আসছে, তার আগে ভারতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি বোঝাতে চাইছে অন্তর্জাতিক মঞ্চে মোদীই বিশ্বগুরু, এমনটাই মত ছিল তাদের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে তিন দিনে ১৫ জনের বেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে সেই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই দেখানোর চেষ্টা হচ্ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
অন্যদিকে ভারত সফর সেরে ভিয়েতনামে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে পৌঁছেই সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে বাইডেন জানিয়েছেন, জি-২০তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার যে পার্শ্ব বৈঠক হয়েছে, সেখানে ভারতে মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটিও তুলেছেন তিনি।
তার কথায়, “আমি এটা সব সময়েই করি। মানবাধিকার, নাগরিক সমাজের গুরুত্ব এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একটা মজবুত ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে সব সময়ে কার্যকরী। এই কথাটা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বলেছি।”
হ্যানয়-তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য ভারতের ঘরোয়া রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তৎক্ষনাৎ লক্ষ্য করে মন্তব্য করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডেল (পূর্বের ট্যুইটার)-এ লিখেছেন, “না প্রেস কনফারেন্স করুঙ্গা, না করনে দুঙ্গা—র কোনও প্রভাব রইল না।”
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বাইডেন-র ভারত সফরের সময়ে মোদী-বাইডেন যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল ওয়াশিংটনের। কিন্তু সংবাদ সূত্রের মতে, মোদী সরকার তাতে রাজি হয়নি। কংগ্রেস নেতাদের মতে, এর কারণ হল যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর আশঙ্কা ছিল, ওয়াশিংটনে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি যেমন অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন, এবারও তা হতে পারত। সেই কারণে জয়রাম রমেশ কটাক্ষ করে বলেছেন, "প্রেস কনফারেন্স না করেও পার পাওয়া গেল না।"
শুধু বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন নন, এর আগে ভারত সফরে এসে তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-ও ভারতে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার প্রশ্নটি তুলেছিলেন। প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি একটি সাংবাদিক বৈঠকেও ভারতে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, “আমি মোদীকে ভাল করে চিনি। আমার যদি ওর সঙ্গে কথা হত, তাহলে আলোচনার অন্যতম বিষয় হত ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার ও সুরক্ষা। কারণ, প্রবল আশঙ্কা রয়েছে যে ভারত ভেঙে টুকরো টুকরো হতে পারে।” তার কথায়, “গণতান্ত্রিক দেশের এরকম অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পরিবেশ থাকলে কী পরিণাম হতে পারে আমরা দেখেছি। সেটা ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী হবে।”