ভারতে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে বিজেপি বিরোধী জোটের সদ্য সমাপ্ত তৃতীয় বৈঠকে যত দ্রুত সম্ভব প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর বৈঠকে ঠিক হয়েছে শুরুতেই কয়েকটি রাজ্যের রাজধানী শহরে জনসভা করবে ‘ইন্ডিয়া’।
জোট সূত্রে খবর, 'ইন্ডিয়া’-র পরের বৈঠক এবং জনসভার জন্য মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপালকে বেছে নেওয়ার হতে পারে। মুম্বইয়ের বৈঠকে প্রথমে ঠিক হয় দিল্লিতে পরবর্তী বৈঠক এবং জনসভা করা হবে কংগ্রেসের উদ্যোগে। সেখানেই বিরোধী বাকি ২৭ দলকে ডাকা হবে। কিন্তু বৈঠক শেষে নতুন কিছু শহরের নাম অনেক নেতা প্রস্তাব করেন। তাতে মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপালের নাম এগিয়ে আছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোপালকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ খুব সহজ। নভেম্বরে যে পাঁচ রাজ্যের ভোট হতে যাচ্ছে তাতে একমাত্র মধ্য প্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ছত্তীশগড় ও রাজস্থানে ক্ষমতায় আছে কংগ্রেস। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় আছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি। মিজোরামে বিজেপি মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের সরকারের শরিক। স্বভাবতই বিজেপি শাসিত মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপালকে দিয়ে প্রথম জনসভা করার প্রস্তাবে অনেক নেতা সায় দিয়েছেন।
দিল্লি রাজধানী শহর হলেও সেখানে ক্ষমতায় আছে আম আদমি পার্টি। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল এই মুহূর্তে শুধু ইন্ডিয়া জোটের শরিকই নয়, কংগ্রেসের সঙ্গেও তাদের দূরত্ব অনেকটা কমেছে। বিশেষ করে মুম্বইয়ের বৈঠকে আপ সুপ্রিমোর কথা সব নেতারই নজর কেড়েছে। বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমাদের মধ্যে মত বিরোধ আছে। কিন্তু আগামী দিনে বিরোধ যতটা সম্ভব পাশে ঠেলে ঐক্যের বার্তাই দিতে হবে।" পরে সাংবাদিকদেরও একই কথা বলেন, কেজরিওয়াল।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ভোপালে বিরোধী জোটের পরের বৈঠক এবং জনসভা হলে আপ কী ভূমিকা নেবে। কারণ, রাজস্থান, ছত্তীশগড়ের পাশাপাশি মধ্য প্রদেশেও আম আদমি পার্টি মাটি কামড়ে লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। রাজ্যের ২৩০ আসনেই তারা লড়াই করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাছাড়া বাস্তব পরিস্থিতি হল, বিজেপির থেকেও আপ-এর আসল লক্ষ্য কংগ্রেসের ভোট কাটা। গুজরাত, দিল্লি, পাঞ্জাব, গোয়া-সহ একাধিক রাজ্যের ভোটে দেখা গিয়েছে, আপ থাবা বসিয়েছে কংগ্রেসের ভোটে।
এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখেও ভোপালে পরবর্তী বৈঠক ও প্রথম জনসভা করার প্রস্তাব এখনও বিবেচনাধীন। জোটের এক নেতার কথায়, "মুম্বইয়ে রাহুল গান্ধী একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তাহল জোটের জন্য একটি অভিন্ন প্রচার ইস্যু তৈরি করা। অভিন্ন প্রচার ইস্যুর সব বিষয়ই থাকবে বিজেপি তথা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। সেই ইস্যুগুলির মধ্যে শরিক নেতারা ভাষণ সীমাবদ্ধ রাখলে মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীশগড়ে কংগ্রেস ও আপ নেতাদের এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।"
উল্লেখ্য, মধ্য প্রদেশে লড়াই করবে সমাজবাদী পার্টিও। কিন্তু জোটের সভাগুলিতে বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ আপাতত এড়িয়ে যাওয়া হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, তাতে মানুষের কাছে বার্তা যাবে, বিরোধীদের বোঝাপড়া শুধুই লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীকে গদিচ্যুত করার লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে।