অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বৃহস্পতি-শুক্রবার ভারতের মহারাষ্ট্রে মুম্বইয়ে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ২৮ দলের ৬৩ নেতা


বৃহস্পতি-শুক্রবার ভারতের মহারাষ্ট্রে মুম্বইয়ে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ২৮ দলের ৬৩ নেতা
বৃহস্পতি-শুক্রবার ভারতের মহারাষ্ট্রে মুম্বইয়ে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ২৮ দলের ৬৩ নেতা

বৃহস্পতিবার ৩১ অগাস্ট ও শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে বসছে বিজেপি বিরোধী ২৮টি দলের জোট ইন্ডিয়া-র তৃতীয় বৈঠক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার ৩০ অগাস্ট বিকালেই মহারাষ্ট্রের মুম্বই পৌঁছে গিয়েছিলেন। বিহারের রাজনীতিবিদ লালুপ্রসাদ যাদব ও তার পুত্র তেজস্বী যাদব দিন কয়েক আগে থেকেই বাণিজ্য নগরীতে আছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌঁছচ্ছেন রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়্গে। বিকাল ৫’টার মধ্যে সব দলের নেতাদেরই মুম্বইয়ে পৌঁছে যাওয়ার কথা।

কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে বৈঠকে যোগ দিয়েছিল ২৬টি দল। মুম্বইয়ে অংশ নেবে ২৮টি দল। নতুন দুটি দল উত্তর-পূর্ব ভারতের। মণিপুর পরিস্থিতির জেরে উত্তর-পূর্বের আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। এই ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তার দল জনতা দল ইউনাইটেড-এর প্রভাব আছে সেখানকার রাজ্যগুলিতে। নতুন দুই দলের যোগদানের খবর প্রথম তিনিই দিয়েছেন।

মুম্বাইয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবারের বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা বিষয়ে জোট সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘরোয়া আলোচনায় অংশ নেবেন নেতারা। সেখানেই জোটের লোগো প্রকাশ করা হতে পারে। ঘোষণা করা হতে পারে স্লোগান। ‘ভারত জুড়েগা-ইন্ডিয়া জিতেগা’- রাহুল গান্ধীর চালু করা এই স্লোগানে সিলমোহর দিতে পারেন বাকি নেতারা। রাত ৮-টায় নৈশভোজে নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র নেতা উদ্ধব ঠাকরে।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দু’টো পর্যন্ত বৈঠক চলার কথা। সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে কথা হবে। জোটের চেয়ারম্যান, আহ্বায়ক কে হবেন সেই আলোচনা হতে পারে। সনিয়া গান্ধী রাজি না হওয়ায় বড় দল হিসাবে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে চেয়ারম্যান এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে আহ্বায়ক করার ভাবনা আছে। যদিও কোনও কোনও নেতা মনে করেন, নভেম্বরে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে জোটের চেয়ারম্যান, আহ্বায়ক ঘোষণা স্থগিত রাখা উচিত। ততদিন স্টিয়ারিং কমিটি বা কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে যৌথ আন্দোলনে জোর দেওয়া হোক। জোটের অনেক নেতা মনে করেন, যৌথ আন্দোলন শুরু করা গেলে আসন সমঝোতা সহজ হয়ে যাবে। অনেক দলই তখন অবস্থান বদল করে সহমত হতে পারে।

জোটের সচিবালয় দিল্লিতে কোথায় হবে তা নিয়েও কথা হতে পারে শুক্রবার। একটি প্রস্তাব হল প্রয়াত সিপিএম নেতা হরকিষেন সিং সুরজিতের নামে দলের একটি ভবন রয়েছে ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত মার্গে। সেই ভবনটি সিপিএমের পার্টি স্কুল। সেখানে সাড়ে চারশো আসনের অডিটোরিয়াম এবং দু সিটের ক্লাস রুম আছে। তৃণমূল কংগ্রেস রাজি হলে ওই ভবনটি হতে পারে ইন্ডিয়া জোটের অফিস। বিরোধী জোট, বিশেষ করে ইউপিএ গঠনে প্রয়াত এই সিপিএম নেতার প্রতি সম্মান জানাতেও অনেকেই ওই বাড়িটিকে ‘ইন্ডিয়া’র সচিবালয় করার পক্ষপাতী।

পাঁচ রাজ্যের ভোটেও ইন্ডিয়া জোট লড়াই করবে না কি এই বোঝাপড়া শুধুই লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রশ্নও সামনে এসেছে। শুক্রবারের আলোচনায় সেই প্রসঙ্গ উঠতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসাবে কাউকে তুলে ধরা হবে না, এই প্রশ্নে মোটামুটি সহমত তৈরি হয়েই আছে। এবারের বৈঠকের আয়োজক মহারাষ্ট্রের নেতারা বলেছেন, বিজেপির একটাই প্রধানমন্ত্রী মুখ। ইন্ডিয়া জোটে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য লোকের অভাব নেই।

অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি কী হতে পারে সে বিষয়ে সূত্রের খবর, মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রণা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য। সে জন্য কর কাঠামো, রাজস্ব আদায়ের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সংস্কারের কথা বলা হবে। রাজ্যগুলির আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে অন্যতম ঘোষণা। গোটা দেশেই বেকার-ভাতা চালুর মতো কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে নেতাদের মধ্যে প্রাথমিক কথা হয়েছে। এক নেতার কথায়, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে সব ইস্যুতে বিরোধী দলগুলি একজোট হয়েছে সেগুলির সবগুলি সম্পর্কেই ‘ইন্ডিয়া’ তার কর্মসূচি, প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করবে।

বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএম ও কংগ্রেস, কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম-এর আসন সমঝোতা, যৌথ আন্দোলনের প্রসঙ্গটি কৌশলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হবে বলেই ঠিক আছে। জোটের বহু নেতা মনে করছেন, দু-চারটি রাজ্য বাদে বাকি জায়গায় তেমন কোনও সমস্যা হবে না। দিল্লি ও পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি বা আপ-কেই সিংহভাগ আসন ছেড়ে দিতে রাজি কংগ্রেস। শতাব্দী প্রাচীন দলটি উত্তর প্রদেশেও সমাজবাদী পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলকে বেশিরভাগ আসন ছেড়ে দেবে।

আবার গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগড়ে আপ বিধানসভা ভোটে লড়াই করলেও লোকসভা নির্বাচনে ওই সব রাজ্যে সিংহভাগ আসনে কংগ্রেসের পাশে থাকবে বলে দু-দলের প্রাথমিক কথা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত কথা হয়নি। তবু ‘রাজ্যে কুস্তি-দিল্লিতে দোস্তি’-র মতো পরিস্থিতি শুধুমাত্র কয়েকটি রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে নেতারা মনে করছেন।

XS
SM
MD
LG