বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক দুটি সংবাদপত্রে ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থায় বেআইনি লেনদেন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে ভারত থেকে কয়েক কোটি ডলার বেআইনি ভাবে বাইরে গিয়েছে। তার পর সেই টাকা ঘুর পথে আদানির সংস্থায় বিনিয়োগ হয়েছে। আর তার মাধ্যমে শেয়ার বাজারে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবং সেই টাকা আবার ভারতে বন্দর, প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করেছে আদানি সংস্থা। বিদেশ থেকে যারা আদানির সংস্থায় টাকা ঢেলেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন চীনের এক নাগরিকও।
সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান ও ফিনান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদন মুম্বইয়ের স্টক মার্কেট থেকে শুরু করে আন্দোলিত করে তুলেছে জাতীয় রাজনীতিকে। মুম্বইতে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের আগে এই নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিলেন রাহুল গান্ধী।
তার প্রথম প্রশ্ন—এত বড় দুর্নীতি সত্ত্বেও কেন আদানিকে আড়াল করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন তিনি নীরব রয়েছেন। গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলা হয়েছে মোদী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানি। সেই ঘনিষ্ঠতা কীসের?
রাহুলের দ্বিতীয় প্রশ্ন—কয়েক দিন আগে আদানি সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করেছে সেবি। সেই সেবির কর্তা এখন আদানি সংস্থার ডিরেক্টর। রাহুলের প্রশ্ন, আদানির তদন্ত বন্ধ করার ক্ষমতা নেই। তা নরেন্দ্র মোদীর রয়েছে। কেন তদন্ত করছে না সরকার?
রাহুল গান্ধীর তৃতীয় প্রশ্ন—ভারত থেকে এই যে কয়েকশ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে, সেই টাকা কার? আদানি সংস্থার নিজের না অন্য কারওর?
রাহুলের চতুর্থ প্রশ্ন—আদানির সংস্থায় চীনের যে নাগরিকের মাধ্যমে বিনিয়োগ এসেছে সেই টাকা ভারতের পরিকাঠামো ও প্রতিরক্ষা খাতে লাগাচ্ছে গৌতম আদানির সংস্থা। এটা কি উদ্বেগের কারণ নয়?
মোটামুটি ভাবে এই প্রশ্নগুলি তুলে এই বেআইনি লেনদেন নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করেছেন রাহুল গান্ধী। অর্থাৎ সংসদের যে কমিটিতে সব দলের সাংসদরা থাকবেন। অতীতে মনমোহন সিং-এর প্রধানম্নত্রীত্বের জমানায় টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়েছিল।
দ্য গার্ডিয়ান ও ফিনান্সিয়াল টাইমস-এ বেআইনি লেনদেন নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে এক প্রস্থ সাংবাদিক বৈঠক করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের বক্তব্য—
আদানির সংস্থার যে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তার মধ্যে ১৩ শতাংশ তহবিল আদানির প্রমোটারদেরই।
সেই তহবিল নিয়ন্ত্রণ করেন গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানি।
কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত বারমুডার দুই ব্যক্তির গ্লোবাল অপরচুনিটি ফান্ডের বড় আয়তনের শেয়ার রয়েছে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হল, বিনোদ আদানির দুই সহযোগী রয়েছেন। একজন সৌদি আরবের ব্যবসায়ী এবং অন্যজন তাইওয়ানের বাসিন্দা।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, শেয়ার দাম বাড়িয়ে দেখানোর বড় অভিযোগ রয়েছে আদানি সংস্থার বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে, সেপ্টেম্বর মাসে ১৮ তারিখ থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যে অধিবেশনের অ্যাজেন্ডা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাহুলের সাংবাদিক বৈঠকের পর পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করতে শুরু করেছেন, সংসদের ওই বিশেষ অধিবেশনও শান্তিপূর্ণ ভাবে চলতে দেবেন না বিরোধীরা। আদানি কাণ্ডে জেপিসি তদন্তের দাবিতে তারা সংসদ অচল করে রাখবেন।