অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রাত নামছে, ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর রোভার প্রজ্ঞান বাঁচবে আর ৭ দিন


চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রাত নামছে, ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর রোভার প্রজ্ঞান বাঁচবে আর ৭ দিন
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রাত নামছে, ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর রোভার প্রজ্ঞান বাঁচবে আর ৭ দিন

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রাত নামছে। ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর রোভার প্রজ্ঞান-এর হাতে আছে আর মাত্র সাত দিন। চাঁদে সূর্যের আলো থাকতে থাকতে বাকি কাজ সেরে ফেলতে হবে তাকে। ইতিমধ্যেই চাঁদে ছ’দিন কেটে গেছে। এর মধ্যেই সালফার-সহ আরও কিছু খনিজের খোঁজ পেয়েছে প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলেছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেছে। তবে তার আরও কাজ বাকি।

নিয়ম মতো ১৪ দিন পরে চাঁদের দক্ষিণ পিঠে অন্ধকার নামছে, তখন আর কাজ করবে না বিক্রম ও রোভারের সোলার প্যানেলগুলি। ২৮ দিন পর চাঁদ পৃথিবীকে পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে আসার পরে ফের সকাল হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।

গত ২৩ অগাস্ট, বুধবার ঠিক সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিল ভারতের তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। পাখির পালকের মতো অবতরণ (সফ্‌ট ল্যান্ডিং) করেছে ল্যান্ডারটি, যা এর আগে কেউ কখনও করতে পারেনি। অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পরে বিক্রমের ভেতর থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে প্রজ্ঞান। এটি ছ’চাকার একটি ছোট রোভার, যার গতিবেগ সেকেন্ডে এক সেন্টিমিটার মাত্র। প্রজ্ঞান বেরিয়ে আসার পর থেকে তার গতিবিধির প্রতিটা মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোকে। ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে ধীর গতিতে কী ভাবে এগিয়ে চলেছে রোভার সেই ভিডিও দেখা গেছে। তার চাকার দাগ পড়ছে চাঁদের মাটিতে।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে রয়েছে সালফার। নিশ্চিত করেছে রোভার প্রজ্ঞান। সালফারের পাশাপাশি অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালশিয়াম, লোহা, ক্রোমিয়াম, টাইটেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, অক্সিজেনের খোঁজও পাওয়া গেছে। এখন হাইড্রোজেনের খোঁজ করছে রোভার।

প্রজ্ঞানে রয়েছে লেজ়ার-ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেক্ট্রোস্কোপ (এলআইবিএস)। নমুনা সংগ্রহ করে তা লেজ়ার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করে উপাদানের বিশ্লেষণ করা হয়। কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুর ইসরোতে ইলেক্ট্রো-অপটিকস সিস্টেমের গবেষণাগারে এই প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। এলআইবিএস-এর মাধ্যমেই চাঁদের বুকে সালফার-সহ বেশ কিছু খনিজের হদিস পেয়েছে প্রজ্ঞান।

ল্যান্ডার মডিউলের পেলোডগুলিও অবতরণের পর থেকেই কাজ করছে। ইলসা, চ্যাস্টে, রম্ভা এবং অ্যারের কৌশলে প্রতিনিয়ত চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

রোভারের ‘লেসার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ’ যন্ত্রের কাজ হল অবতরণস্থলের আশপাশে চাঁদের মাটিতে কী উপাদান কত পরিমাণে রয়েছে তা খুঁজে বার করা।

চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই, চৌম্বকক্ষেত্রও নেই। তবে বিপুল জলের খোঁজ পেলে, সেখান থেকে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে ভেঙে নেওয়া সম্ভব। এই অক্সিজেন শ্বাসপ্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখবে। আর হাইড্রোজেন ব্যবহার করা যেতে পারে জ্বালানি হিসেবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আবার বরফ থাকার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। চাঁদের এই অন্ধকার পিঠের ঠিক কোথায় বরফ জমে আছে তার খোঁজ চালাবে প্রজ্ঞান। সেই কাজ এখনও বাকি।

ইসরো জানিয়েছে, চাঁদে হাইড্রজেন, এমোনিয়া, মিথেন, সোডিয়াম, পারদ (মারকারি) এবং রূপো তো মিলবেই, পাশাপাশি চাঁদের বালিকণা থেকে নিষ্কাশন করা যেতে পারে হিলিয়াম-৩ মৌল। পৃথিবীতে প্রাপ্ত ডয়টেরিয়াম অক্সাইড (D2O)-এর সঙ্গে হিলিয়াম-৩ মৌলের বিক্রিয়ায় তৈরি হবে বিপুল পরিমাণ শক্তি। এড়ানো যাবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিপদ। চাঁদের ধুলো, বালিকণা থেকে এই হিলিয়াম-৩ মৌলের খোঁজ চালাবে চন্দ্রযানের রোভার ‘প্রজ্ঞান।’

XS
SM
MD
LG