অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নির্বাচনী রাজনীতিতে মহিলা ভোটারদের ভোট পেতে বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণার প্রতিযোগিতা ভারতের রাজ্য সরকারগুলির


২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বড় ভোটব্যাঙ্ক মহিলাদের মন জয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, মোদী, শিবরাজ, সিদ্দারামাইয়া-রা।
২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বড় ভোটব্যাঙ্ক মহিলাদের মন জয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, মোদী, শিবরাজ, সিদ্দারামাইয়া-রা।

ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার মঙ্গলবার ২৯ অগাস্ট থেকে গৃহলক্ষী যোজনা শুরু করেছে। এই যোজনা খাতে রাজ্যের দরিদ্র মহিলাদের মাসে ২০০০ টাকা করে দেবে কংগ্রেস সরকার। অন্যদিকে রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ২০০ টাকা কমিয়ে মঙ্গলবারই কেন্দ্রের মোদী সরকার জানিয়েছে, "এ হল বোনেদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর রাখি উপহার।"

মধ্য প্রদেশেও বিধানসভা ভোট আসছে। প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় আক্রান্ত সেখানকার বিজেপি সরকার। এই অবস্থায় রাখি উপহার ঘোষণা করেছেন মধ্য প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও। ‘লাডলি বেহেনা’ বা আদরের বোন যোজনায় দরিদ্র মহিলাদের মাসে ১২৫০ টাকা করে দেবে সরকার। এ ব্যাপারে রাজস্থান সরকারও পিছিয়ে নেই। রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার এপ্রিল মাস থেকেই দরিদ্র পরিবারদের জন্য ৫০০ টাকায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে এহেন যোজনা খাতে মাসিক টাকার পরিমাণ কম। কিন্তু বলা যেতে পারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার প্রকল্পই এ ব্যাপারে পথপ্রদর্শক। সেই সঙ্গে কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মতো প্রকল্প বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের জন্য তো রয়েছেই। স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডও তৈরি হয় পরিবারের মহিলা প্রধানের নামেই।

২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বড় ভোটব্যাঙ্ক মহিলাদের মন জয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, মোদী, শিবরাজ, সিদ্দারামাইয়া-রা এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের। যে লড়াইকে বলা হচ্ছে ‘পাওয়ার অফ ফর্টিনাইন’। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ হলেন মহিলারা।

২০২১-র ভোটে বাংলায় তৃণমূলের বড় জয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই এই কথাটাই বলেছিলেন। তাদের মতে, মহিলারা বিপুল সংখ্যায় মমতাকে ভোট দিয়েছিলেন। একে তো তৃণমূল বোঝাতে চেয়েছিল বহিরাগতদের আক্রমণে বাংলার মেয়ে আক্রান্ত। তাদের মতে, দ্বিতীয়ত, গেম চেঞ্জার হিসাবে কাজ করেছিল লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ঘোষণা। বিজেপিও ভোটের আগে সেটা বুঝতে পেরে ভোট ইস্তাহারে মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে সরকারি বাসে ভ্রমণ ইত্যাদির ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ততক্ষণে হয়তো দেরি হয়ে গিয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, পুরুষরা বেশিরভাগই ওপিনিয়নেটেড। অর্থাৎ মনে মনে কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করেন। গ্রাম ও মফস্বলের মহিলারা তাদের সংসার, ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। দল বা মতাদর্শের ভিত্তিতে তারা ভোট দেন না।

আগে দেখা যেত, বাড়ির পুরুষরা যাকে ভোট দিতে বলতেন, তাকেই ভোট দিতেন তারা। নিজের মত ছিল না।

কিন্তু এখন এই মহিলারা নিজেদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ব্যাপারে সচেতন। সংসারে কীসে সুরাহা হতে পারে সে ব্যাপারেও সচেতন। তাই যে সরকার বা রাজনৈতিক দল তা সুনিশ্চিত করার কথা বলছে, তাদের মহিলা ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। সেই কারণে তাদের আস্থা অর্জণের চেষ্টা করছেন, মমতা, মোদী, শিবরাজ, সিদ্দারামাইয়া-রা। এবং এই মহিলাদের মন জয় করে একটা উপভোক্তা শ্রেণি তথা ভোট ব্যাঙ্কও তৈরি করতে চাইছেন।

কিছুদিন আগে দেখা গিয়েছিল, ভোটের সময়ে বিনামূল্যে কিছু দেওয়ার ঘোষণা বা মাসে একটা নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দেওয়ার ঘোষণাকে 'ফ্রি কা রাবড়ি' বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন ভোটারদের কেনার চেষ্টা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলাও হয়েছিল। কিন্তু তাতে ব্যাপারটা আটকানো যায়নি। বরং বিজেপি শাসিত রাজ্যও এখন এই মডেল নিয়ে চলছে। নইলে ভোটের ময়দানে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা যথেষ্ঠই, মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের।

XS
SM
MD
LG