বৃহস্পতিবার ৩১ অগাস্ট ও শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বইতে বসতে চলেছে বিজেপি বিরোধী জোটে ইন্ডিয়া-র তৃতীয় বৈঠক। দু’দিনের বৈঠকে এক গুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। তারমধ্যে অন্যতম হল, ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দুই মুখ অর্থাৎ চেয়ারপার্সন এবং কনভেনর বা আহ্বায়ক কে হবেন তা স্থির করা। এছাড়া, অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি এবং যৌথ আন্দোলনের বিষয়েও কথা হবে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী আসন বোঝাপড়ার বিষয়ে আঞ্চলিক স্তরে আলোচনা করা হবে। জোটের শীর্ষ থেকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। যৌথ আন্দোলনের প্রশ্নেও একই অবস্থান নেবে জোট। অর্থাৎ আঞ্চলিক বাস্তবতা মেনে যৌথ সভা-সমাবেশ হবে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূলের যৌথ সভা সম্ভব নয়, এই বিষয়টি তিন দলই স্পষ্ট করে দিয়েছে। কেরলেও সিপিএম এবং কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে এক মঞ্চে দাঁড়াবে না।
আপাতত ঠিক হয়েছে জোটের সচিবালয় হবে রাজধানী দিল্লিতে। তবে সেটা কোনও রাজনৈতিক দলের অফিস নাকি ভিন্ন কোনও জায়গা এ জন্য বেছে নেওয়া হবে, সেই ব্যাপারেও মুম্বইয়ের বৈঠকে কথা হবে। ‘ভারত জুড়েগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’—রাহুল গান্ধীর তৈরি এই স্লোগানকেই ইন্ডিয়া জোটের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হতে পারে, সংবাদ সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে।
ইন্ডিয়া জোটের চেয়ারপার্সন কে হতে পারেন, এই প্রশ্নকে সামনে রেখে কংগ্রেসের পাশাপাশি শরিক দলগুলি নিজেদের মতামত জানাবে। আগের জোট ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন ছিলেন সনিয়া গান্ধী। ইউপিএ-তে কোনও আহ্বায়ক পদ ছিল না। ইন্ডিয়া জোটে আহ্বায়ক পদ রাখার প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই ঘরোয়া আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দল চায় সনিয়া গান্ধী ইউপিএ-র মতো ইন্ডিয়া জোটেরও চেয়ারপার্সন হোন। কিন্তু সনিয়া তা চান না। দলকে নিজের অবস্থান তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। মুম্বইয়ের বৈঠকে তার নাম প্রস্তাব করা হলে সেখানেও একই কথা বলবেন। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, প্রথমত, তিনি অসুস্থ। দ্বিতীয়ত, গান্ধী পরিবারের কেউ জোটের মুখ হলে বিজেপি-র হাতই শক্ত হবে। এই বিষয়টিকে নরেন্দ্র মোদী গান্ধী পরিবারকে আক্রমণের ইস্যু করে নেবেন। সনিয়ার রাজি না হওয়ার পিছনে দ্বিতীয় কারণটিই মুখ্য বলে মনে করা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কংগ্রেস, দলীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে চেয়ারপার্সন করার প্রস্তাব দিতে পারে। কারণ দলিত সম্প্রদায়ের মুখ খাড়্গেকে আক্রমণ করা বিজেপির পক্ষে তেমন সহজ কাজ হবে না। খাড়্গের ব্যাপারে শরিক দলগুলিও তেমন একটা আপত্তি করবে বলে মনে করছে না কংগ্রেস।
কিন্তু চিন্তা রয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে নিয়ে। তিনি গত তিন দিনে তিনবার বলেছেন, "আমি কোনও পদ চাই না। আমার কাজ ছিল বিরোধী দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা। সেই কাজ করে দিয়েছি। আমি পদের আসায় এই উদ্যোগ নিইনি।"
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নীতীশ পদ চাই না বললেও জোটের নেতারা বুঝতে পারছেন এসবই বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর অভিনানের কথা। তার দল চায় তাকেই জোটের মুখ করা হোক। কারণ নীতীশই বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে বিরোধী নেতাদের জোটবদ্ধ করেছেন। তার এবং তার দল 'জনতা দল ইউনাইটেড' আশা করেছিল বেঙ্গালুরুর বৈঠকে অন্তত জোটের আহ্বায়ক হিসাবে নীতীশের নাম ঘোষণা করা হবে।
কিন্তু ওই বৈঠকের আয়োজক কংগ্রেস এই ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। নীতীশ যে তাতে অসন্তুষ্ট তা বুঝিয়ে দেন বৈঠক শেষ হওয়া মাত্র বেঙ্গালুরু ত্যাগ করে। সাংবাদিক বৈঠকেও ছিলেন না তিনি। পাটনায় ফিরে বহুদিন তিনি বেঙ্গালুরুর বৈঠক নিয়ে কোনও কথা বলেননি।
মাত্র দিন কয়েক হল তিনি মুম্বইয়ের বৈঠক নিয়ে মুখ খুলেছেন। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ঠিক হয়েছিল জোট পরিচালনায় একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গড়া হবে। নীতীশকে জোটের নাকি ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।