ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল বছর দুয়েকের শিশুকন্যার। ভারতের কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু থেকে রাজধানী দিল্লি নিয়ে আসার পথে মাঝ আকাশে বিমানের ভেতরেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ধীরে ধীরে কমতে থাকে নাড়ির স্পন্দন। একসময় শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করে শিশুটির। নিথর শরীরের উপর কান্নায় যখন ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা, সেই সময়েই পরিত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন ওই বিমানেই থাকা দিল্লি এইমস-এর পাঁচ চিকিৎসক। তারাই প্রাণ ফিরিয়ে দেন শিশুকন্যার।
ভিস্তারা ইউকে-৮১৪ বিমানে এই ঘটনা ঘটেছে। এইমস-এর পাঁচজন চিকিৎসক ডা. নভদীপ কৌর, ডা. দমনদীপ সিং, ডা. রিষভ জৈন, ডা. ঐষিকা ও ডা. অভিচালা মাঝ আকাশে বিমানেই শিশুকন্যার চিকিৎসা করে নজির গড়েছেন। টানা ৪৫ মিনিট ধরে বাচ্চাটিকে সিপিআর দেন ডাক্তারবাবুরা। অন্যান্য থেরাপিও করেন বিমানেই। আইভি ক্যানুলা বসিয়ে শিশুটির শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করা হয়। ধীরে ধীরে প্রাণের স্পন্দন জাগে শিশুকন্যার শরীরে।
এইমস-এর সিনিয়র কার্ডিয়াক রেডিওলজিস্ট ডা. দমনদীপ বলছেন, বাচ্চাটি জন্ম থেকেই সায়ানটিক। ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (ভিএসডি) অর্থাৎ হৃদযন্ত্রে ছিদ্র বা চলতি ভাষায় হৃদযন্ত্রের নীচের অংশের দুটো প্রকোষ্ঠ (নিলয়) বিভাজনকারী পর্দায় ছিদ্র নিয়ে জন্মায় বহু শিশু। এই সমস্যা সঙ্গে সঙ্গে ধরা না পড়লেও জন্মের কিছুদিন পরে তা ধরা পড়ে। ভিএসডি হল এক রকমের কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ় বা হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটিজনিত অসুখ। কনজেনিটাল হার্ট ডিজ়িজ় সাধারণত দু’রকম হয়। সায়ানটিক এবং অ্যাসায়ানটিক। সায়ানটিক কনজেনিটাল হার্টের অসুখে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমের জন্য শরীরের কোনও কোনও অংশ নীলচে হয়। এই ধরনের শিশুদের বলে ‘ব্লু বেবি’।
কোনও শিশুর ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট থাকলে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যাবে শিশুটি দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, খাওয়ায় অনীহা, অল্পতেই ঝিমিয়ে পড়া ইত্যাদি। ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট হলে বারবার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়। কখনও হার্ট ফেলিয়োর হয়। এই অসুখে ফুসফুসে রক্তের চাপ বৃদ্ধি হতে পারে, যাকে পালমোনারি হাইপারটেনশন বলা হয়, যা সঙ্কটজনক অবস্থায় পৌঁছতে পারে। মাঝ আকাশে শিশুকন্যাটির সেই অবস্থাই হয়েছিল। কিন্তু অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা থাকায় শিশুকন্যাটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়।