ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে রামমন্দির নির্মাণের কাজ জোরকদমে চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মন্দির নির্মাণ এবং লাগোয়া ৭১ একর জায়গা সাজিয়ে তোলার কাজ শেষ হয়ে যাবে। তারপর শুরু হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কাজ। মন্দির নির্মাণ ট্রাস্টের নৃপেন্দ্র মিশ্র এই খবর জানিয়ে বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মন্দির উদ্বোধন করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি এখনও তারিখ জানাননি। তবে আগামী বছর জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মন্দির উদ্বোধন করবেন।"
প্রসঙ্গত, আগে ঠিক ছিল ২২ অথবা ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মন্দিরের উদ্বোধন করবেন। মন্দির ট্রাস্ট ওই দুটি দিন বাছাই করেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিল।
প্রাক্তন আমলা নৃপেন্দ্র মিশ্র দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি ছিলেন। তার আগে ছিলেন টেলিকম রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান। সুপ্রিম কোর্ট রাম মন্দির নির্মাণে একটি ট্রাস্ট গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল সরকারকে। সেই ট্রাস্ট্রের শীর্ষে সরকার মিশ্রকে বসিয়েছে।
তিনি রামমন্দির নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে অনেক কথা জানিয়েছেন। মিশ্র জানান, ভিড় মোকাবিলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তার প্রাথমিক দায় রাজ্য সরকারের হলেও কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মন্দিরের সুরক্ষা নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করছে।
রাম মন্দির চালু হয়ে গেলে দিনে এক লাখ ভক্ত সমাগম হবে ধরে নিয়ে ভিড় মোকাবিলার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে কোনও কোনও বিশেষ দিনে পাঁচ লাখ এমনকী দশ লাখ ভক্তের সমাগম হতে পারে ধরে নিয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অযোধ্যা প্রশাসনের ধারণা, দেশের তো বটেই গোটা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গন্তব্য হতে চলেছে অযোধ্যা। তবে যারা সেখানে রামলালা অর্থাৎ শিশু রামের মূর্তি দর্শন করতে যাবেন, তারা সেখানে দাঁড়াতে পারবেন মাত্র কুড়ি সেকেন্ড।
মিশ্র জানান, ভিড় এবং নিরাপত্তার কারণেই সাধারণ ভক্তরা কুড়ি সেকেন্ড রামলালার মূর্তি দর্শন করতে পারবেন। প্রসঙ্গত, এখন অস্থায়ী মন্দিরে থাকা রামলালা দর্শনের সুযোগ মেলে আরও কম সময়। প্রায় আড়াই-তিন মিটার দূর থেকে প্রণাম করার সুযোগ মেলে মাত্র।
অযোধ্যায় নতুন রামমন্দিরটি তৈরি হচ্ছে তিন একর জায়গা জুড়ে। এর বাইরে আরও সাত একর জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দির পরিক্রমা অঞ্চল হিসাবে। এর বাইরে আরও ৭১ একর জমি মন্দির ট্রাস্ট অধিগ্রহণ করেছে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেখানে ভক্তরা অপেক্ষা করতে পারবেন।
কী কী সামগ্রী দিয়ে মন্দির তৈরি হচ্ছে সে ব্যাপারেও আলোকপাত করেছেন রাম মন্দির নির্মাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান। তিনি জানান, প্রাচীন মন্দিরগুলির মতো অযোধ্যায় নির্মীয়মান রাম মন্দিরে ইস্পাতের রড ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়নি সাধারণ সিমেন্টও। পাথরের উপর পাথর বসিয়ে তৈরি হচ্ছে মন্দির। তিনি বলেন, "মন্দিরের নিচে থাকা পিলারের চারপাশে যে মাটি ফেলা হয় ২৮ দিনের মধ্যে তা পাথরে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ পাথরের পিলার পাথর দিয়েই ঘেরা আছে মাটির নীচে। এরফলে মন্দিরের ভিত অনেক মজবুত হয়েছে। দেশের সেরা ইঞ্জিনিয়াররা এই কাজে যুক্ত।"
যেমন মন্দিরের গঠন শৈলী তৈরি করেছেন খড়গপুর আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়াররা। পিলার-সহ মন্দিরের নির্মাণ কাজের তদারকি করছেন আইআইটি চেন্নাইয়ের ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তিবিদরা। আর মন্দিরকে ভূমিকম্পসহ যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সইয়ে নেওয়ার মতো করে গড়ে নেওয়ার কাজটি করছে সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট।