"ইন্দিরা গান্ধীর মারা যাওয়ার পর দেশ জুড়ে ঘটে যাওয়া শিখ নিধনের ঘটনায় ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল রাজীব গান্ধীর। উল্টে তাঁর উক্তি দাঙ্গা আরও উসকে দিয়েছিল।"
"অটল বিহারী বাজপেয়ী নন, বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের নরসিংহ রাও। যাঁর সময়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। তিনি মনে করতেন, ভারত একটি হিন্দু রাষ্ট্র।"
এমনই সব বিতর্কিত মন্তব্য তার সদ্য প্রকাশিত বইয়ে করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার।
রাজীব গান্ধীর সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের শেষ কথা হয়ে ওঠা কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে মণিশঙ্কর ছিলেন অন্যতম। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী রাজীবের সচিবদের মধ্যে অন্যতম। পরে রাজীবের কথায়, ফরেন সার্ভিসের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘদিন কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন আমলা থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা মণিশঙ্কর।
সম্প্রতি তার আত্মজীবনী ‘মেমোয়ার্স অফ মাভেরেক’-এর প্রথম খণ্ডে কংগ্রেসের দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল নিয়ে অনেক কথা লিখেছেন দীর্ঘদিন প্রচারের আলোর বৃত্তের বাইরে থাকা এই কংগ্রেস নেতা।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আলগা মন্তব্যের মতো তার বইও বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর কাছে কংগ্রেসকে আক্রমণে ধারালো অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সমালোচনার জবাবে বিজেপি এবং মোদী সর্বদা দিল্লির দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। যদিও কংগ্রেস দলগতভাবে শিখ নিধনের ঘটনার নিন্দা করেছে।
১৯৮৪-র ৩১ অক্টোবর নিজের দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে নিহত হন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেদিন সন্ধ্যায় অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা পুত্র রাজীব। মণিশঙ্কর লিখেছেন, তার ধারণা ছিল ইন্দিরার শূন্য আসনে বসবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু অবাক হন যখন জানতে পারেন, রাজনীতিতে নাবালক রাজীব হতে চলেছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
শিখ নিধন নিয়ে সদ্য প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসা রাজীব মন্তব্য করেছিলেন "বড় গাছ পড়ে গেলে অনেক কিছুই লন্ডভন্ড হয়ে যায়।" ইন্দিরার মৃত্যুকে বড় গাছ পড়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা টেনে শিখ বিরোধী দাঙ্গাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেন রাজীব। মণিশঙ্কর লিখেছেন, তখনই রাজীবের উচিৎ ছিল শিখ বিরোধী দাঙ্গার জন্য ক্ষমা চাওয়া।
তিনি তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের আর এক প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের। তিনি লিখেছেন, বিজেপির মন্দির রাজনীতির মোকাবিলায় তিনি রাম-রহিম যাত্রা বের করার প্রস্তুতি নিলে প্রধানমন্ত্রী রাও তাকে মানা করেন। রাও বলেন, "মণি, তোমার এটা বোঝা উচিৎ ভারত বাস্তবে একটি হিন্দু রাষ্ট্র। আসলে রাওই ছিলেন বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী।"
প্রসঙ্গত, ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাও। দিনটি ছিল রবিবার। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু অযোধ্যায় কী হতে পারে আঁচ করে প্রধানমন্ত্রী রাওকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, উত্তর প্রদেশের কল্যাণ সিংয়ের সরকারকে বরখাস্ত করে কেন্দ্রের উচিৎ রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা। আর মসজিদ রক্ষা করতে অবিলম্বে অযোধ্যায় সেনা নামানো প্রয়োজন। কিন্তু রাও সেই পরামর্শে কানে তোলেননি। টেলিভিশনের পর্দায় মসজিদ ভাঙার দৃশ্য দেখতে পেয়ে অনেক কংগ্রেস নেতা প্রধানমন্ত্রী রাওকে সেদিন ফোন করেন। কিন্তু তিনি বেশিরভাগ নেতার ফোন ধরেননি। পরে জানা যায়, মসজিদ ভাঙার সময় রাও তার ঘরে পুজো এবং ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাবরি নিয়ে রাজীব গান্ধীর ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন মণিশঙ্কর। আসলে প্রধানমন্ত্রী রাজীবই বাবরি মসজিদের বন্ধ তালা খুলে দিয়ে সেখানে রামলালার মূর্তি পূজার অনুমতির ব্যবস্থা করেছিলেন। মণিশঙ্করের কথায়, রাজীবের ওই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তিনি জানিয়েছেন, বাবরি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং শাহবানু মামলার রায় নিয়ে রাজীবের ভুলত্রুটি নিয়ে বইয়ের পরবর্তী সংস্করণে আলোকপাত করবেন।