অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরামে ভয়াবহ দুর্ঘটনা: ভেঙে পড়ল নির্মীয়মান রেলব্রিজ, মৃত অধিকাংশ শ্রমিক


উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরামে ভয়াবহ দুর্ঘটনা: ভেঙে পড়ল নির্মীয়মান রেলব্রিজ, মৃত অধিকাংশ শ্রমিক
উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরামে ভয়াবহ দুর্ঘটনা: ভেঙে পড়ল নির্মীয়মান রেলব্রিজ, মৃত অধিকাংশ শ্রমিক

বুধবার ২৩ অগাস্ট উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরামে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। নির্মীয়মাণ একটি রেলব্রিজ ভেঙে পড়ে সেখানে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। ঘটনাস্থলে আরও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার ভারতীয় সময় সকাল ১১টা নাগাদ মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে সাইরাং এলাকায়। জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় ওই ব্রিজে অন্তত ৪০ জন কর্মী কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। ধ্বংসস্তূপ থেকে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের সাইরাং শাখা বর্তমানে তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।

এদিনের ঘটনার শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, মৃত কর্মীদের মধ্যে মালদহের ২৪ জন পরিযায়ী শ্রমিকেরা রয়েছেন।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের (এনএফআর) প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা সব্যসাচী দে জানিয়েছেন, "যে সেতুটি ধসে পড়েছে সেটি ছিল উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের রাজধানীকে সংযুক্ত করার জন্য ভারতীয় রেলওয়ের একটি প্রকল্পের অংশ। কয়েক বছর ধরে এটির নির্মাণকাজ চলছে। আজ সকাল ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা এখনও দুর্ঘটনার পিছনে কারণ এবং তখন কতজন লোক সেখানে ছিল তা নিশ্চিত করতে পারিনি।"

কুরুং নদীর উপর তৈরি করা হচ্ছিল সেতুটি। এটি বৈরাবি এবং সাইরাং রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে অবস্থিত। সেতুর পিয়ারের উচ্চতা ১০৪ মিটার। মিজোরামের রাজধানীতে পৌঁছানোর আগে সাইরাং রেলওয়ে স্টেশনটি শেষ রেলপথ হতে চলেছে। সম্পূর্ণ হওয়ার পর প্রকল্পটি আইজলকে জাতীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করবে।

মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা ঘটনার জন্য শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, "আইজলের কাছে সাইরাং-এ নির্মীয়মাণ রেলওয়ে ওভারব্রিজ আজ ভেঙে পড়েছে, অন্তত ১৫ জন শ্রমিক মারা গেছেন। উদ্ধার কাজ চলছে। এই দুর্ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত। আমি সমস্ত শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করার জন্য যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

রেলের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হলে পরিবারকে চাকরি এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কেন্দ্রকে দাবি তুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী

মাত্র কয়েক মাস আগেই পূর্ব ভারতের ওড়িশায় ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তিনশো জনের। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বাংলার বহু মানুষও। বাংলার নিহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। কিন্তু রেল এখনও নিহতদের পরিবারকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়নি বলে অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার সকালে মিজোরামে নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। তাদের মধ্যে এরাজ্যের মালদহের ২৪ জন শ্রমিক রয়েছেন। এদিন কলকাতার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গন থেকে একথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রেলের কাজ করতে গিয়ে মারা গেলে মৃতের পরিবারকে চাকরি এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমি রেলের কাছে এটা জানাব। কারণ, তারা আপনাদের রেলের কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছে। রেল তার দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারে না।”

আর্থিকভাবেও রেল আগের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে বলেও এদিন অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । মমতার কথায়, “রেলের অবস্থা দুর্বিষহ। সেই রেল আর নেই। রেলের বাজেটও তুলে দেওয়া হয়েছে।”

২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের মুখে ভেঙে পড়েছিল কলকাতার অন্যতম জনহুল এলাকার পোস্তা সেতু। মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের। আহত হন প্রায় ৮০ জন। ওই ঘটনায় রাজ্যের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন ওই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের এখানে একটা ব্রিজ ভেঙেছিল, তাতে ২৬ জন মারা গিয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী কত কটুক্তি করেছিলেন। অথচ সম্প্রতি গুজরাতে এবং বিহারে সেতু ভেঙে বহু মানুষের মৃত্যু হল। প্রধানমন্ত্রী কিছু বললেন না। বাংলায় কিছু হলেই গেল গেল রব তোলা হয়। আমি এসব নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না।”

নাম না করে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটের সময় রাজনীতির করার অভিযোগও এনেছেন মমতা। তিনি বলেন, “আমাদের সরকার মানবিক সরকার। অনেকে মুখে বড় বড় কথা বলে, মরে গেলে খোঁজও নেয় না। আমরা কিন্তু সর্বক্ষণ মানুষের পাশে থাকি। কারণ আমরা মানবিক।”

XS
SM
MD
LG