ভারতে এবার পেঁয়াজ নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। টম্যাটোর পর পেঁয়াজের সরবরাহ এবং দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের চাহিদা মেটাতে গত শনিবার ১৯ অগাস্ট পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রবিবার ২০ অগাস্ট থেকেই মহারাষ্ট্রের চাষিরা পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাবের পেঁয়াজ চাষি এবং ব্যবসায়ীরাও একই রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছেন। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। সমানতালে বাড়ছে দাম।
দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজ সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। তবে পেঁয়াজের চাহিদা দেশের সর্বত্র। এইরকম একটি অতি প্রয়োজনীয় সব্জির দাম দিন দিন বাড়তে থাকায় চিন্তায় পড়েছেন ক্রেতারাও। ক’দিন আগে টম্যাটোর দাম সরকারকে চিন্তায় ফেলেছিল। তবে সেটা ছিল উত্তর ভারতে বন্যা পরিস্থিতির কারণে। জাতীয় সড়ক জলে ডুবে থাকায় টম্যাটো বাজারে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে সাতশো শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল।
টম্যাটোর দাম স্থিতিশীল হতেই শুরু হয়েছে পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তা। গত শনিবার থেকে কেন্দ্র সরকার খাতায় কলমে না হলেও বাস্তবে পেঁয়াজ রপ্তানি একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারের তরফে বলা হয় পরবর্তী নির্দেশ জারি না করা পর্যন্ত বিদেশে পেঁয়াজ পাঠাতে হলে ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক দিতে হবে। চাষিদের বক্তব্য, এত চড়া হারে রপ্তানি শুল্ক মিটিয়ে পেঁয়াজ পাঠিয়ে লাভের মুখ দেখা কঠিন। আবার দেশীয় বাজারে বিক্রি করে উপযুক্ত দাম পাওয়া কঠিন। প্রতিবাদে মহারাষ্ট্রের কৃষকেরা স্টোর থেকে পেঁয়াজ বের করা বন্ধ করে দিয়েছেন। একই পথে হাঁটছেন অন্য রাজ্যের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও উৎপাদকেরাও।
এদিকে, চলতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছেন মহারাষ্ট্রের পূর্তমন্ত্রী তথা বিজেপির এক নেতা দাদা ভুসে। তিনি বলে বসেছেন, "দু-চার মাস পেঁয়াজ না খেলে স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হয় না। কী দরকার বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কেনার। দেখাই যাক, চাষিরা কতদিন পেঁয়াজ হিমঘরে আটকে রাখে!"
মন্ত্রীর কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন রাজ্যের মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিশ জানান, তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার দু’লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ কিনে কম দরে বিক্রি করবে। বিশেষজ্ঞ মহল প্রশ্ন তুলেছে, তাতে মহারাষ্ট্রবাসীর অভাব মিটবে। কিন্তু বাকি রাজ্যগুলির কী হবে তা অজানা।
সংবাদ সূত্রের খবর, আগামী নভেম্বরে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। অগাস্ট মাস শেষ হলেই দেশে উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে যাবে। এই সময় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নির্বাচনে প্রভাব ঠেকানো কঠিন। এক প্রবীণ বিজেপি নেতার কথায়, "আলু-টম্যাটো-পেঁয়াজ ভারতবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় সব্জি। এরমধ্যে পেঁয়াজ হল সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। এই সব্জি ছাড়া একটি দিনও চলে না। কোথাও মানুষ তরকারি তো কোথায় বেশি করে স্যালাডে খায়।"
পর্যবেক্ষকদের মতে, অতীতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে সরকার হাতছাড়া হয়েছিল বিজেপির। সেই অতীত বিবেচনায় রেখে সরকারি কর্তারা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। বিজেপির নেতাদেরও বলা হয়েছে কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বসে একটা মীমাংসা সূত্র বের করতে। সরকার আইন ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোল্ড স্টোরেজ থেকে জোর করে পেঁয়াজ বের করলে চাষির ভোট হারানোর ভয় আছে।