বাংলাদেশে অপরিচ্ছন্ন ও বিস্তৃন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দেওয়া চীনের একটি উদ্যোগকে রোহিঙ্গারা সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখছে। এখন যারা মিয়ানমার শাসন করছে সেই একই সামরিক বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গারা হত্যা ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছিল।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা ত্রাণ স্বেচ্ছাসেবকঅং মিয়াইং ভয়েস অফ আমেরিকাকে টেলিফোনে বলেন, "আমরা বাড়ি ফিরতে চাই। তবে এই পাইলট পরিকল্পনার আওতায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীআমাদের ক্যাম্পে আটকে রাখবে। তারা আমাদের বাড়ি ও গ্রামে ফিরে যেতে দেবে না।"
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপএখানকার শরণার্থীদের জন্য উদ্বেগের চেয়ে চীনের নিজের স্বার্থের কারণেই করা হচ্ছে। চীন যদি সত্যিই সহায়তা করতে চায়, তাহলে তাকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই কাজ করতে হবে।
২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার যাদের অধিকাংশই মিয়ানমারে সামরিকবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে পালিয়ে এসেছে তারা সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাস করছে। এই দমন পীড়ন বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা মামলার বিষয়।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দুই বছরেরও বেশি সময় পর চীন ক্ষমতাসীন জান্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুনরায় শুরু করেছে। গত ২৭ জুলাই চীনের বিশেষ দূতদেং শিজুন মিয়ানমারে দুই দিনের আকস্মিক সফরে যান এবং শীর্ষস্থানীয়জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সামরিক জান্তার মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন ভয়েস অফ আমেরিকাকে টেলিফোনে জানান, “আমরা আমাদের শান্তি প্রক্রিয়া, চীন-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী ইস্যুগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।”
চীনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংসহ চীনের প্রতিনিধিরা এ বছর বেশ কয়েকবার মিয়ানমার সফর করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে সেখানে চীনের ঘন ঘন এই সফরএটাই ইঙ্গিত দেয় যে চীন সেখানে তার বৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্পগুলি পুনরায়বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
জানুয়ারি মাসে চীন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য একটি পাইলট প্রত্যাবাসন কর্মসূচি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করে। গত এপ্রিলে দেং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঢাকা সফর করেন। ঐ একই মাসে চীনইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত ত্রিপক্ষীয়বৈঠকের (চীন, মিয়ানমার,বাংলাদেশ) আয়োজন করে।
কমিটি পাইলট কর্মসূচির আওতায় মাত্র ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব করে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবাসন পরিস্থিতিমূল্যায়নের জন্য একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল এবং সেই মাসেরশেষের দিকে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সাথে দেখাকরে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা বলেছেন, পাইলট প্রোগ্রাম টি কবে শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়।