ভারতের প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে, মে মাসে শুরু হওয়া দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা, গভীর জাতিগোষ্ঠীগত বিভাজন তৈরি করেছে। বিদ্যমান এই পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে একটি মূখ্য রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে৷
রাজ্যের শহর ও গ্রামে জনতা তাণ্ডব চালানোর তিন মাস পর, মেইতিস, যারা প্রধানত হিন্দু এবং কুকি এবং অন্যান্য উপজাতি, যারা বেশিরভাগ খ্রিস্টান, তাদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত পাহাড়ি রাজ্যে হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনী টহল দিচ্ছে।
সংঘাতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪০ জন নিহত এবং শত শত বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩২ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজ্যটিতে আনুমানিক ৬০,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করছে।
বিদ্রোহ এবং আদিবাসীদের বৈরিতা কয়েক দশক ধরে মণিপুরকে সমস্যায় ফেলেছে, কিন্তু এই সময়ে জাতিগোষ্ঠীগত বিভাজন সবচেয়ে গভীর। বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার, যারা কেন্দ্রীয় সরকার এবং মণিপুর প্রশাসন উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে, সংঘাত রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সপ্তাহান্তে মণিপুর সফরকারী বিরোধী দলগুলির ২১-সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যের গভর্নরের কাছে জমা দেওয়া এক স্মারকলিপিতে বলেছে, "সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি রয়েছে, যা অবিলম্বে সুরাহা করতে হবে।"
যদিও প্রত্যন্ত রাজ্যটি খুব কমই জাতীয় শিরোনাম হয়ে আসে। দুই সপ্তাহ আগে দুই নারীকে নগ্ন করিয়ে প্যারেড করানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর, মণিপুর আলোচনায় উঠে আসে। ঘটনার বিষয়ে দায়ের করা একটি পুলিশ অভিযোগ অনুসারে, এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে৷ জাতিগোষ্ঠীগত বৈরিতার মধ্যে জনতা রাজ্যে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছিল বলে নারীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা সহিংসতার কয়েকটি ঘটনার মধ্যে এটি একটি।
এটি মোদিকে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করে। তিনি ২০ জুলাই সংসদের বাইরে এক বক্তৃতায় বলেন, "মণিপুরের কন্যাদের সাথে যা হয়েছে, তা কখনই ক্ষমা করা হবে না।"
এটি বিরোধী দলগুলিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি - প্রধান বিরোধী কংগ্রেস পার্টি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, আগামী সপ্তাহে সোমবার থেকে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
সংসদে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এই প্রস্তাবটি সহজেই বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিরোধী নেতারা বলছেন, এই পদক্ষেপটি মোদীকে সংঘাতের বিষয়ে কথা বলতে বাধ্য করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে — ভিডিওতে দেখানো নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময়, তিনি সংঘাতের বিষয়ে বিস্তৃত কিছুই বলেননি।
লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীরজা চৌধুরীর মতে, "সরকারের প্রধান হিসাবে, লোকেরা আশা করেছিল যে তিনি এ বিষয়ে নিশ্চয়ই কিছু বলবেন এবং অন্য কিছু না হলে অন্তত শান্তির আবেদন করবেন। এখন সরকার নিজেই আলোড়ন সৃষ্টি করছে এবং প্রথমে যা করতে হবে তা হল জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।"
সরকার বলছে, তারা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। কিন্তু রাষ্ট্র যেহেতু ধারে কাছেও নেই , তাই জাতিগোষ্ঠীগত বিভেদ দূর করা অতো সহজ হবে না।