অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভারতে বিজেপি শিবিরের ভরসা এনডিএ জোটের ইতিহাস


ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুর ভেলোরে রাজ্য বিজেপি নরেন্দ্র মোদী সরকারের নয় বছর পূর্তি উদযাপনের জন্য এক সভার আয়োজন করেছিল। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে সেই সভার বিশেষ অতিথি অমিত শাহের ভাষণ শুনে মনে হচ্ছিল যেন এনডিএ অর্থাৎ বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের পঁচিশ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

মোদী সরকারও এনডিএ অর্থাৎ জোটেরই সরকার। তবে ২০১৪-এ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী বিজেপির শেষ কথা হয়ে ওঠার পর থেকে একে একে শরিকদলগুলি ছেড়ে গিয়েছে বিজেপিকে। বিজেপি শিবিরের নেতাদের মুখ থেকেও হারিয়ে গিয়েছে অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীদের তৈরি এনডিএ-র কথা। সেই বিস্মৃতি এতটাই যে গত ১৫ মে এনডিএ-র পঁচিশ বছর পূর্তির দিনে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের কেউ একটা টুইট করেও এই জোটের কথা স্মরণ করেননি। যদিও ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারই দেশের প্রথম জোট যারা পাঁচ বছর টিকে ছিল।

ভেলোরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভাষণ শুনে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, ২০২৪-এ শুধু মোদী ম্যাজিকের ভরসায় ভোট বৈতরণী পেরনোর আশা ত্যাগ করেছে বিজেপি। বিজেপি শিবিরের নেতারা তাই এনডিএ-র কথা আবার বলতে শুরু করেছেন।

ভেলোরের সভায় শাহ বলেন, "২০২৪-এ ফের তিনশো আসনে বিজয়ী হয়ে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। তামিলনাড়ুর ২৫টি আসনে এনডিএ-কে জয়যুক্ত করে মোদীর জয়যাত্রা নিশ্চিত করতে আমি রাজ্যবাসীর প্রতি আর্জি জানাচ্ছি। দিকে দিকে এনডিএ প্রার্থীদের জয়যুক্ত করুন।" শুধু এই একবারই নয়, শাহের ভাষণ জুড়ে ছিল এনডিএ-র নামে সরকারের গুণগান। এমনকী জোট রাজনীতিতে এনডিএ-র ভূমিকারও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আগামী লোকসভা নির্বাচন নিয়ে কৌশল বদল করছে বিজেপি। রাজ্যে রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক বন্ধু খুঁজতে শুরু করেছে বিজেপি শিবির। বছরের গোড়ায় বিজেপি জানিয়েছিল, ২০২৪-এ তারা চারশো আসনের টার্গেট করে লড়াইয়ে নামবে। দল নিশ্চিত ছিল, অন্তত সাড়ে তিনশো আসনে জয় আসবেই। বাকি আসন তারা শরিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে।

কিন্তু কর্নাটকের ভোটের ফল এবং বিরোধী শিবিরের তৎপরতা দেখে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে আগের কৌশলে লক্ষ্যপূরণ হবে না। বরং বিরোধীদের আটকাতে হলে বেশ কিছু আসন ছোট ছোট দলকে ছেড়ে দেওয়া দরকার। এই কাজটি তারা নিষ্ঠার সঙ্গে করেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। সেখানে এমন দলও বিজেপির শরিক যাদের সংসদে পা রাখার সৌভাগ্য হয়নি। মোদী-শাহ-নাড্ডা জুটি মনে করছে এই সব দলকে উপেক্ষা না করে বরং পাশে দাঁড়ালে আসল লক্ষ্যপূরণ অর্থাৎ বিরোধী জোটকে আটকে দেওয়া যাবে।

গত মাসে দু’দিনের সফরে তামিলনাড়ুতে গিয়ে বিজেপি সভাপতি নাড্ডা রাজ্য নেতাদের নতুন শরিক খোঁজার নির্দেশ দেন। সেখানে বর্তমান শরিক এআইএডিএমকে-র অন্দরে এখন তুমুল বিরোধ চলছে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইকে পালানাস্বামী এবং ও পানিরসেলভমের। তাই চিন্তিত বিজেপি শিবির।

সদ্য ক্ষমতা হারানো কর্নাটকে বিজেপির নয়া শরিক হতে পারে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার জনতা দল সেকুলার। বিরোধী দলগুলির আহ্বান প্রত্যাখান করে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ৯৩ বছর বয়সি দেবগৌড়া।

বিজেপি শিবিরের খবর, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর বিএসপির সঙ্গেও বোঝাপড়ার রাস্তা খোলা রাখছে বিজেপি শিবির। মায়াবতীর দলের পরিস্থিতি ভালো না হলেও দলিত নেত্রীর ক্যারিসমা এখনও যথেষ্ট বলে মনে করছে দল। বিজেপি হাত বাড়িয়েছে প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির শরিক রাষ্ট্রীয় লোকদলের দিকেও। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাঠ ভোটারের মন পাওয়া বিজেপির জন্য মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা সম্পূর্ণ হয় আরএলডি প্রধান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চরণ সিংহের নাতি জয়ন্তকে জোটে আনা গেলে।

XS
SM
MD
LG