ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, গত বছর পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভের সময় ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার দায়ে দোষী সাব্যস্ত তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের মিজান অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইট জানিয়েছে, মাজিদ কাজেমি, সালেহ মিরহাশেমি এবং সাঈদ ইয়াঘুবিকে মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইসফাহানে একটি বিক্ষোভের সময় বন্দুক ব্যবহার করার জন্য "মোহরেবেহ" বা "আল্লাহ্র বিরুদ্ধে যুদ্ধ" করার অভিযোগে এবং এতে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্য নিহত হওয়ার জন্য তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
ইরানে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী ইরানি-কুর্দি আমিনির মৃত্যুর পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে।তাকে পোশাক পরিধানের কঠোর আইন লংঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বিক্ষোভের সময় হাজার হাজার ইরানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং কয়েক ডজন নিরাপত্তা বাহিনী সহ শত শত লোক প্রাণ হারায়। ঐ বিক্ষোভকে তেহরান সাধারণত বিদেশী-প্ররোচিত "দাঙ্গা" হিসাবে চিহ্নিত করে।
শুক্রবার ফাঁসি কার্যকর করার পর বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত ইরানিদের সংখ্যা দাঁড়াল সাতজনে।
নভেম্বর মাসে কাজেমি, মিরহাশেমি এবং ইয়াঘুবিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জানুয়ারিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
মিজান জানিয়েছে, ঐ তিনজনের বিরুদ্ধে “জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে অবৈধ গোষ্ঠীর সদস্যপদ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিরুদ্ধে অপরাধ করার জন্য” অভিযোগ আনা হয়েছে।
এতে বলা হয়, "মামলার প্রমাণ ও নথি পত্র এবং অভিযুক্তদের দেওয়া স্পষ্ট বক্তব্যে দেখা গেছে যে এই তিনজনের গুলিতে তিন নিরাপত্তা বাহিনী শহিদ হয়েছেন”। তাদের বিষয়গুলি অস্ট্রেলিয়াসহ বহির্বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় কাজেমি পরিবারের কিছু সদস্য বাস করে।
তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ হাশেমি অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের কাছে তার সমর্থন চেয়ে একটি খোলা পত্র পাঠিয়েছেন।
change.org পিটিশন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চিঠিতে হাশেমি লিখেছেন, “মজিদের বয়স মাত্র ৩০ বছর। সে ছিল একজন সহানুভূতিশীল, প্রেমময় এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি। অন্য অনেক ইরানির মতো সে-ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল এবং সোচ্চার হয়ে পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ইরান প্রতি বছর চীন ব্যাতিত অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
কর্তৃপক্ষ গত বছর চারজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় আন্তর্জাতিক সমাজ এর নিন্দা জানিয়েছে।