ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী রাতভর একটি হাসপাতাল এবং ছাত্রাবাসকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছে। শনিবার একটি অধিকার গোষ্ঠী বলেছে, মাহসা আমিনির মৃত্যুতে উদ্দীপ্ত প্রতিবাদ আন্দোলন টানা সপ্তম সপ্তাহে গড়িয়েছে।
কুর্দি বংশোদ্ভূত ২২ বছর বয়সী ইরানী তরুণী আমিনি, ইসলামী শরিয়া আইনের উপর ভিত্তি করে নারীদের জন্য ইরানের কঠোর পোশাকের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে তেহরানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশি হেফাজতে মারা যান।
আমিনি হত্যার ৪০ দিন পূর্তি উপলক্ষে শনিবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর দিভান্ডারেহে এক শোকসভা থেকে বিক্ষোভকারীরা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে উদ্দেশ্য করে "স্বৈরশাসকের মৃত্যু হোক" বলে স্লোগান দেয়।
অধিকার গোষ্ঠীগুলি বলছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর দিভান্ডারেহে বিক্ষোভ চলাকালীন ২৮ বছর বয়সী মোহসেন মোহাম্মদী নামে এক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে দাঙ্গা পুলিশ, এবং পরের দিন পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সানন্দাজের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কাউসার হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
হেঙ্গাও অধিকার গোষ্ঠী বলেছে, আরও এক আহত বিক্ষোভকারীকে রক্ষা করার জন্য শুক্রবার গভীর রাতে একই হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া কয়েক ডজন লোক নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির কবলে পড়ে।
নরওয়ে ভিত্তিক সংস্থাটি বলেছে, "আশকান মারওয়াতি নামের ওই বিক্ষোভকারীকে রক্ষা করার জন্য যারা কাউসার সানন্দজ হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়েছিল, তাদের উপর দমনকারী বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়।"
এর পর পরেই, একই নিরাপত্তা বাহিনী কুর্দিস্তান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের "পাশে অবস্থিত ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক ভবনে গুলি চালায়" বলে জানিয়েছে হেঙ্গাও।
এএফপি দ্বারা যাচাইকৃত অনলাইন ফুটেজে, নিরাপত্তা বাহিনীকে ডরমেটরি বা ছাত্রাবাস ভবনে গুলি করার আগে, এক ডজনেরও বেশি মোটরবাইক করে আসতে দেখা যায়।
অন্যান্য যাচাইকৃত ফুটেজে, নিরাপত্তা বাহিনীকে শুক্রবার গভীর রাতে তেহরানের চিটগার আবাসিক এলাকায় কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে দেখা যায়, যেখানে আগের রাতে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
অনলাইনে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা ভিডিওগুলিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শনিবার রাজধানী তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ ইরানের কেরমান এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহসহ, অন্যান্য এলাকায় পুনরায় বিক্ষোভ শুরু করে।
হেঙ্গাও জানায়, সকালে কেরমানশাহের একটি রাস্তায় আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালায়, এতে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়।
অসলো ভিত্তিক ইরানের মানবাধিকার গোষ্ঠীটি দুই ডজনেরও বেশি শিশুসহ কমপক্ষে ১৬০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে। তারা বলছে, ব্যাপক দমন পীড়ন সত্ত্বেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
খামেনি এবং অতি-রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সতর্কতাকে উপেক্ষা করে দেশজুড়ে এই সর্বসাম্প্রতিক গণবিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে, ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রক এবং রেভল্যুশনারি গার্ডের গোয়েন্দা পরিষেবাগুলি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইএ-কে দেশটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য অভিযুক্ত করেছে।