বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকদের ওপর হামলা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা হিন্দু সম্প্রদায়ের। একজন সম্প্রতি মারাও গেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও এই ধরনের ঘটনা থামছে না।
শিক্ষকদের সঙ্গে যা হচ্ছে
শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম সমালোচনার ঝড় তোলে ২০১৬ সালে। সেবছর ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যাণদির একটি স্কুলে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে শারীরিক নির্যাতন ও কান ধরে উঠবস করানো হয়। নির্যাতনের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়া এই শিক্ষককে দুই মাস হাসপাতালে কাটাতে হয়। এমনকি জেলেও যেতে হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের এখনো বিচার হয়নি।
শ্যামল কান্তির ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর এই ২০২২ সালে এসে একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছেন হিন্দু শিক্ষকেরা। গত মার্চে মুন্সীগঞ্জের একটি স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল লাঞ্ছিত হন। ১৯ দিন কারাভোগ করতে হয় তাকে। এরপর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে তিনি মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পরে মিথ্যা বলে ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি।
ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এপ্রিলে নওগাঁয় এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে। দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল শিক্ষার্থীদের মারধর করেছেন-এমন দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি পরে প্রতিবেদনে জানায়: ঘটনার দিন হিজাব নয়, নির্ধারিত স্কুল ড্রেস না পরার কারণে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমোদিনী পাল।
এরপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উন্মেষ রায় এবং আরো দুজন শিক্ষকের শাস্তির দাবি তুলে আন্দোলন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
গত ১৮ জুন নড়াইলের কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো হয়। তিনি ধর্ম অবমাননাকারীর পক্ষ নিয়েছেন-এমন অভিযোগ তুলে পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে এভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এই ঘটনায় খুলনা বিএল কলেজের এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদ করছেন।
এরপর ২৫ জুন আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী কলেজের মাঠে প্রকাশ্যে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে তারই ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। পরে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২৭ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যান। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় শিক্ষকের ভাই বাদী হয়ে মামলা করলে ২৮ জুন রাতে কুষ্টিয়া থেকে জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজিকে ও ২৯ জুন গাজীপুর থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিতুকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
প্রতিক্রিয়া
রানা দাশগুপ্ত
সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু শিক্ষকদের টার্গেট করে যে হামলাগুলো অব্যাহত রয়েছে, এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। আমরা মনে করি, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক শক্তি সরকারের ভেতর এবং বাইরে থেকে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে। ঠিক ৭১-এর মতোই সংখ্যালঘুদের এ দেশ থেকে বের করে দেয়ার নীলনকশা হিসেবে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। এই সংখ্যালঘু শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ তারই সর্বশেষ পদক্ষেপ বলে আমার কাছে মনে হয়।
বিভিন্ন সরকারি নিয়োগে দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে বিসিএস, সেখানে সংখ্যালঘুদের প্রশাসনিক ক্যাডার বা প্রতিরক্ষা ক্যাডারে খুব বেশি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সবচেয়ে অবহেলিত বলেই মনে করা হয়, সেখানে সংখ্যালঘুদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এখন এই শিক্ষকদের যাতে নিয়োগ দেয়া না হয়, এবং যে শিক্ষকেরা আছেন, তারা যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে এই লক্ষ্য নিয়েই ভীতির সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টা চলছে। এভাবে শিক্ষকদের নিষ্ক্রিয় করে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ
সহ-উপাচার্য (প্রশাসন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা এটার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। সরকারের কাছে বিচারের দাবি জানাই।
সরকার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু আমরা যারা সমাজের মানুষ বা নাগরিক, তাদের প্রতিবাদ করায় ঢিলেমি বা ধীরগতি রয়েছে। এটা কাম্য নয়। আমাদের জন্য লজ্জার দিক। কাজেই ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।
সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে এ জন্য সরকারকে একদিকে ধন্যবাদ জানাই এবং নাগরিক সমাজকে আমরা আরো দ্রুত সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাই।
ড. আসিফ নজরুল
অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারা দেশে শিক্ষক লাঞ্ছনার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখলাম গত কয়েক মাসে। আমরা যখন ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করি, তখন প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করি না। সংখ্যালঘু লোকেরা আক্রান্ত হলেই ধরে নেয়া হয়, এটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা। এতে প্রকৃত সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো আড়ালে পড়ে যায়। স্কুলে স্টাম্প দিয়ে যে ছেলেটা শিক্ষককে মারল, এখানেতো সাম্প্রদায়িক ঘটনা নেই। সমস্যা হলো সব ঘটনাকে আমরা সাম্প্রদায়িক বলে চিত্রায়িত করতে চাই। তখন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে-সব ঘটনাই কি সাম্প্রদায়িক নাকি।
আরেকটা ব্যাপার হলো, আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িক কারণে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে, সেটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আমাদের এখনে ধর্মীয় বিষয়ে স্পর্শকাতরতা অনেক বেশি। শুধু যে মুসলিমদের ভেতর ধর্মীয় সেনসিটিভটি বেশি, ব্যাপারটা তেমন নয়। সংখ্যালঘুদের ভেতরও অনেক বেশি। একটা ঘটনা নাম ধরে বলি: আনিস আলমগীর নামের একজন শিক্ষক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আমার বিভাগের একজন শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জন, তার একটা বক্তব্যের জন্যও মামলা হয়েছিল। আমি যতদূর জানি, তারা দুজনই উদার নৈতিক মানুষ। কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক না। এই উদাহরণ দেয়ার কারণ হলো, আমাদের এখানে সব ধর্মেই স্পর্শকাতরতা কাজ করে। সে জন্য সবারই ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
যেসব জায়গায় ধর্মীয় কারণে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো পৃথক করতে হবে। পাশাপাশি অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা বাদে অন্য যে কারণ সেটা হলো রাজনৈতিক কারণ। ক্ষমতাসীনদের সহায়তায় একটা বিরাট উচ্ছৃঙ্খল প্রজাতির জন্ম দেয়া হচ্ছে। এরা মারামারি, টেন্ডারবাজি করে। যা ইচ্ছা তাই করে।
এই সংস্কৃতির পেছনে আছে রাজনৈতিক কারণ। এটা অ্যাড্রেস করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এর পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে সরকার। সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো তো ব্যক্তি বা মহল-বিশেষ করে।
শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার পেছনে কী, কারণটা কী হতে পারে, করণীয় কী এটা আলাদাভাবে অনুধাবন করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক ঘটনায় সরকার প্রতিবাদ করে মূলত চাপে পড়ে। জনমত তৈরি হওয়ার পর করে।
ড. কাবেরি গায়েন
অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এসব ঘটনায় একটা বার্তা আছে। আমাদের শিক্ষকেরা এখন নাজুক পরিস্থিতিতে। অবস্থা আরও খারাপ হয় যখন তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু বা জাতিগত সংখ্যালঘু হন।
যারা প্রভাবশালী তাদের রাজনৈতিক ক্ষোভ কিংবা বৈষয়িক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেন। ছোট ছোট বাচ্চাকে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজেই এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অপরাধ। রাষ্ট্র এখানে নিশ্চুপ। সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা সম্প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী একটা বক্তব্য দিয়েছেন, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত অপরাধীদের শনাক্তে আমরা সরকারি দল থেকে কোনোরকম শক্ত বার্তা দেখিনি। বিচার তো সেখানে দূরের কথা।
সরকারি দল ব্যবস্থা তো করেই না, অন্য যে বিরোধী রাজনৈতিক দল আছে... একমাত্র বামপন্থী একটা দুটা সংগঠন বাদ দিলে আর কোনো সংগঠনকে দেখবেন না এই বিষয়ে সোচ্চার হতে। তার মানে রাষ্ট্র ধরেই নিয়েছে এ জাতীয় কাজ করা যায়। এই যে অবস্থা- শাস্তিহীন, জবাবদিহিহীন, এগুলো যখন বার বার ঘটে তখন লাঞ্ছনাটা মৃত্যু বা হত্যায় এসে পরিণত হয়।
হৃদয় মণ্ডল
ভুক্তভোগী শিক্ষক
এখনো আমি ভয় পাচ্ছি, ক্লাসে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি না। ক্লাস করাতে গেলে কিছু উশৃঙখল ছেলেমেয়েকে কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে পারি না। সেই সব স্যারেরা বা দুষ্কৃতিকারীরা হয়তো উসকিয়ে দিচ্ছে। ক্লাসে একেবারে নিরাপদ না। আগের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে আর কোনদিন ক্লাস মনে হয় করা সম্ভব হবে না। পরিবার নিয়েই শঙ্কায় আছি।
সারা দেশে প্রত্যক্ষ হোক, পরোক্ষ হোক যেভাবেই হোক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর পেছনে উস্কানি দিচ্ছে স্কুলের কিছু শিক্ষক। বাইরের কিছু শিক্ষক আছে, যারা বাচ্চাদের লেখাপড়া থেকে দূরে রেখে দেশটাকে পঙ্গু করতে চায়। এমনকি বিজ্ঞানটাকে এরা বইয়ে রাখতে চায় না। বিজ্ঞানের কথা বলতে এখন ভয় পাই।
মৃণালকান্তি দাস
সংসদ সদস্য
দেশের কয়েকটি স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, আমি তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি মনে করি, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে এবং ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা অনেকাংশেই ভিত্তিহীন, কল্পিত, উদ্ভট, অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত। সরকার ঘটনাগুলো অবহিত হওয়ার পর যে ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা যথাযথ। সব জায়গায় ইতিমধ্যে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আমি মনে করি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী শক্তি, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন, তারা যদি আরো উচ্চকিত হন তাহলে এ ধরনের নিন্দনীয় ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
ঘটনাগুলোকে সাম্প্রদায়িক বলে দেশটাকে ছোট করতে চাই না। তবে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে সকল শিক্ষকেরা আছেন, তাদের ওপর নির্যাতনটা বেশি। এর মুল কারণ হলো তারা মানসিকভাবে শক্তিহীন, এবং হয়তো বংশীয় লোকবলের অভাব। যে কারণে তাদের ওপর অত্যাচার করে সহজে পার পাওয়া যায়। কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলিম পরিবারের কারো ওপর আঘাত আসলে দেখা যায়, কোনো না কোনো শক্তিধর ব্যক্তি তার পেছনে দাঁড়ায়।
শুধু শিক্ষক নয়; হিন্দুদের ওপর যে অত্যাচার-অনাচারগুলো হয়, এগুলো সিংহভাগ লোকই পছন্দ করেন না। কিন্তু প্রতিবাদ করার জন্য কেউ পক্ষে দাঁড়ায় না।
আমাদের দেশের যে প্রশাসন আছে তাদের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক মনোভাব আছে। মানে যেকোনো হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান কোনো অভিযোগ-অনুযোগ করলে, তারা খুব একটা পাত্তা দেন না। অর্থাৎ বিচার প্রাপ্তির জায়গাটাও তাদের জন্য রুদ্ধ। সেকারণেই হয়তো তারা বেশি নির্যাতিত হয়।
আমি রাজনীতি করি। যদি বলি হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হয় তাহলে বিষয়টা অন্যজনে সুযোগ নিবে। আমার দেশের মানসম্মানের প্রতিও একটু আঘাত আসবে।
সরকার নূন্যতম ব্যবস্থাও নেয় না। কারণ সরকারি লোকজনই এগুলো করছে। এখন সেটা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি হোক আর অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি হোক, সরকার তো ঠিকমতো আইনের শাসন বা সিটিজেন রাইটস রক্ষা করছে না। নিজেদের স্বার্থটা দেখছে।
নূর খান
মানবাধিকারকর্মী
শিক্ষকদের ওপর হামলা নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্তরূপ প্রকাশ করেছে। শিক্ষক সমাজ যেমন অন্ধ দলীয় রাজনীতিতে নেমেছেন; ঠিক তেমনি আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষের মর্যাদার জায়গাটা ভঙ্গুর হয়েছে। এর মূল কারণ শিক্ষক সমাজের সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে অংশ নেয়া। আমরা এর আগেও শিক্ষকদের অনেককেই দেখেছি সরাসরি রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে, তাদের একটা নৈতিক মান ছিল, নৈতিক ভিত্তি ছিল। তারা উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
এখন যে শিক্ষকদের সঙ্গে ঘটনাগুলো ঘটছে, তাদের একটা বড় অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। যারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত, যারা আক্রমণ করেছেন; তারা মূলত প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে সরকারি দলের সমর্থক বা নেতা। সারা দেশে সরকারি দলের যে দমনপীড়ন এবং অস্থিরতা, তারই বহি:প্রকাশ আমরা দেখছি শিক্ষকদের ওপর হামলা। তার মানে হচ্ছে সরকারি দল যারা করেন, তারা মনে করেন সমাজের বাকি জনগোষ্ঠী তাদের প্রজা। এমন ভাবনা থেকেই হামলাগুলো হচ্ছে। এর সহজ সরল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম
অ্যাডভোকেট, সুপ্রিমকোর্ট
হিন্দু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে ঘটানগুলো ঘটছে-শারীরিক আক্রমণ করা, লুটপাট করা, ভাংচুর করা, প্রত্যেকটা ঘটনা খুবই জঘন্য অপরাধ।
এটা অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা। আমাদের আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা এবং যে গোয়েন্দারা তদন্ত করছেন তাদের ব্যর্থতা। এসব ক্ষেত্রে যত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত, তাদের উদাসীনতায় সেটা নেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে যে রাজনীতিবিদেরা আছেন, তাদেরও একটা বড় ধরনের উদাসীনতা আছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যোগসাজশেও এসব হচ্ছে।
একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে যে তদন্ত হচ্ছে সেগুলোতে পরিষ্কার ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি। এগুলো আমাদের অ্যাড্রেস করতে হবে। এটা তো খুব স্পষ্ট যে ধর্মের খোলসে এই ধরনের ধর্মের পরিপন্থী কাজগুলো হচ্ছে। কারণ কোনো ধর্মই তো এসব কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না।
ঘটনাগুলো থামাতে নতুন আইন প্রণয়নের দরকার নেই। আইন সব এখানে আছে।