২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় যত মানুষ মারা গেছেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ করেছেন আত্মহত্যা। অথচ মানসিক সমস্যাকে রোগ হিসেবেই ‘ভাবেন না’ দেশটির অধিকাংশ মানুষ। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মনের চিকিৎসা নেয়ার যে সুযোগ তাকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন মনোবিদ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার কল সেন্টারে মনোবিদের সাহায্য চেয়ে ক্লান্তিকর এক অভিজ্ঞতা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। কল সেন্টারে মনোবিদ চেয়ে পাওয়া যায়নি। যে নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয় তাদের প্যাকেজ কিনে রীতিমতো হতাশ হতে হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছে, ডেডিকেটেড হেল্পলাইন না থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার কলসেন্টারের মাধ্যমে আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের সেবা দেয়া হয়।
বাংলাদেশে আত্মহত্যা করা মানুষের সংখ্যা নিয়ে বেশ আলোচনা হয় ২০২১ সালে। তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন তাদের এক প্রতিবেদনে ওই সময় দাবি করে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেন। এই সময় করোনায় প্রাণ হারান ৮ হাজার ৪৬২ জন।
এই গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভয়েস অফ আমেরিকা। তিনি জানান, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়ে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করেন। ওই গবেষণার পর আত্মহত্যা নিয়ে সার্বিকভাবে আর কোনো পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেনি আঁচল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণায় তারা গত বছর শতাধিক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার তথ্য পেয়েছেন।
নারীদের সংখ্যা বেশি
বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে বেশি নারী আত্মহত্যা করে থাকে বলে জানিয়েছে আঁচল। ১৪ হাজার ৪৩৬টি আত্মহত্যার ঘটনার মধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি এবং পুরুষের আত্মহত্যার ঘটনা ৬ হাজার ২০৮টি।
আত্মহত্যার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহননকারী হচ্ছেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা- ৫ শতাংশ।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বুঝতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা একটি ডেটাশিট সরবরাহ করেছে ভয়েস অফ আমেরিকাকে। এই সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন দুইজন নারী, ‘অন্য কারণে’ আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। আর ফেব্রুয়ারিতে আত্মহত্যা করেছেন মোট ১৫ জন নারী। দেশের ১৩টি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে মহিলা পরিষদ।
হেল্পলাইনের খোঁজে ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতা
সরকারি পর্যায়ে হেল্পলাইনের সন্ধান করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গেলে ‘যে কোনো জরুরি’ স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১৬২৬৩ নম্বর পাওয়া যায়। নম্বরটিতে ফোন করলে ৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মাথায় একজন চিকিৎসককে দেয়া হয়। তিনি সমস্যার কথা জানতে চাইলে মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ চাওয়া হয়। জবাবে ওই চিকিৎসক জানান এখানে সাইকিয়াট্রিস্ট নেই। বলেন, ‘‘আপনি ২৭৮৯৯ নম্বরে ফোন দিতে পারেন। এরা আমাদের সঙ্গে যুক্ত।’’
এই নম্বর সরকারি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুটা সময় নিয়ে তিনি বলেন, "না, না। এটা সরকারি না। তবে আমাদেরই আন্ডারে। গ্রামীণফোন ছাড়া অন্য নম্বর দিয়ে ফোন দিতে হবে। টাকা কাটবে। না হলে সোহরাওয়ার্দীর পাশে মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে যাবেন।’’
এবার ২৭৮৯৯ নম্বরে ফোন করলে শুরু হয় অপেক্ষার পালা। প্রথম দফায় ১ মিনিট ৩১ সেকেন্ড কথা বলার পর বোঝা যায় এটা মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের মাইন্ডকেয়ার প্যাকেজ। অটোমেটেড ভয়েসে নম্বরটি থেকে দাবি করা হয়, "এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মনোবিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। সার্ভিসটি সাতদিনের জন্য সাবস্ক্রাইব করতে ভ্যাটসহ ১৯ টাকা ৯৯ পয়সা প্রযোজ্য। সাথে পাবেন মনোবিদের পরামর্শ পেতে ২০ মিনিট ফ্রি টকটাইম। সার্ভিসটি পেতে চাইলে এক চাপুন।"
এক চাপার পর ফিরতি মেসেজে বলা হয়, ‘‘MON চালু করতে ৬০ মিনিটের মধ্যে A লিখে ২৭৮৯৯ নম্বরে এসএমএস করুন।’’ এসএমএস করার পর সার্ভিসটি চালু হলে আবার ২৭৮৯৯ নম্বরে ফোন করা হয়। এবার বলা হয় মনোবিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে শূন্য চাপুন।" শূন্য চাপার পর নারীকণ্ঠে বলা হয়, "প্রিয় গ্রাহক, আপনাকে ধন্যবাদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি কথা বলবেন আমাদের একজন মনোবিদের সাথে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সবগুলো লাইন এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে। আপনার কলটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের একজন প্রতিনিধি শীঘ্রই আপনার কলটি রিসিভ করবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত অনুগ্রহ পূর্বক অপেক্ষা করুন।’’
এভাবে বারবার অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু এই অপেক্ষা আর শেষ হয় না। টাকা দিয়ে কেনা প্যাকেজের মেয়াদ এক সময় শেষ হয়ে যায়। ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের মাথায় কেটে যায় কলটি।
হেল্পলাইনে ব্যর্থ হয়ে রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা-নগরে অবস্থিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে গেলে চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে হেল্পলাইন নেই বলে জানান সেখানে কর্মরত এক চিকিৎসক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, দুপুর ২টা পর্যন্ত এখানে বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। এরপর সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। সাইকোথেরাপি নেয়ার ব্যবস্থাও আছে।
হাসপাতালটিতে ঘুরতে ঘুরতে জরুরি বিভাগে সাভার থেকে আসা এক রোগীর দেখা মেলে। তিন সন্তানের পিতা এই মধ্যবয়সী পুরুষকে ‘পাগল’ হিসেবে পরিচয় করাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। এই প্রতিবেদককে শুধু বললেন, "আব্বা পাগল হয়ে গেছে। তাই এখানে নিয়ে এসেছি।"
মনের যত্নে অবহেলা
আত্মহত্যার প্রবণতাকে বাংলাদেশে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয় সেটি বুঝতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নোটিশের দিকে নজর দিতে বললেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং বাংলা একাডেমির ফেলো অধ্যাপক মোহিত কামাল। নামকরা এই মানসিক চিকিৎসক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘‘আমি তাদের অমন নোটিশে লজ্জিত। তারা বলছে কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তার আসন বাতিল করা হবে। এটি হচ্ছে সবচেয়ে নির্মম এবং নিষ্ঠুর একটি কথা। কোনো শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত থাকলে আত্মহত্যা করতে চাইবে, তাকে তখন সাপোর্ট দিতে হবে। কাউন্সিলিং করাতে হবে। সেটা না করে ইউনিভার্সিটি ঘোষণা দেয় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে হল থেকে বের করে দেয়া হবে। আমি তাদেরকে সতর্ক করে বলছি কেউ সেখানে আত্মহত্যা করলে এটা হত্যা বলে প্ররোচিত হবে। বলব প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাকে প্ররোচিত করা হয়েছে।’’
মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যেসব সুযোগ পাওয়া যায় তাকে ‘অপর্যাপ্ত’ মন্তব্য করলেও মোহিত কামাল বললেন সরকার অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে, ‘‘ম্যানপাওয়ার তৈরি করতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে বড় উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগ নিয়েছেন। তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও এ বিষয়ে কাজ করছেন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে উন্নত করার জন্য দেশে কাজ হচ্ছে।’’
মনের যত্ন নেয়া প্রসঙ্গে মানুষের এই উদাসীনতার বিষয়ে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘‘এই ধারণাটাই আমাদের ডেভেলপ করেনি। মেয়েদের ভেতর আত্মহত্যা বাড়ছে। অনেক স্কুলে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়ছে। সেখানে তারা নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শুধু যে শারীরিকভাবে হেনস্তা হচ্ছে, তা নয়। শারীরিক ভাষা, নেতিবাচক তাকানো এগুলো একটা মেয়েকে ট্রমার মধ্যে, ডিপ্রেশনের মধ্যে নিয়ে যায়। এগুলো তারা কারো সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। তার ফলে ডিপ্রেশনে ভুগছে। এক পর্যায়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।’’
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, "প্রতিটি স্কুলে এখন কাউন্সিলর থাকা দরকার। ইভ টিজিং বলেই এগুলোকে শেষ ভাবলে চলবে না। যৌন নির্যাতনের বিষয়ে হাইকোর্টের যে রায় আছে, তা অনুসরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে। স্কুলে স্কুলে যৌনাচার এবং যৌন হেনস্তার বিষয়ে ছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রদেরও বোঝাতে হবে। তার সঙ্গে কাউন্সিলর রাখতে হবে।’’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যা বলছে
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, ‘‘আত্মহত্যাকে বাংলাদেশে মানসিক সমস্যা হিসেবে অ্যাড্রেস করতে অ্যাকশন প্লান হাতে নেয়া হয়েছে। সেটি পাস হওয়ার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাস হলে আত্মহত্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’’
এ বিষয়ে নানা ধরনের গবেষণা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরকারিভাবে ডেডিকেটেড হেল্পলাইন নেই। তবে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার হেল্পলাইনের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়।’’
আত্মহত্যার ঘটনাগুলোকে বাংলাদেশের মিডিয়ায় যেভাবে তুলে ধরা হয় তা নিয়ে অধিদপ্তরের অসন্তোষের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মিডিয়াগুলোতে যেভাবে এসব ঘটনা প্রচার করা হয় তা ঠিক না। এতে সমস্যা বাড়ে। এ বিষয়ে নীতিমালা গঠনের কাজ চলছে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের চিত্র
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা দিনকে দিন বাড়ছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালে যেখানে ৭৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন, সেখানে ২০২১ সালে ১০১ জন।
শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য কোনো হেল্পলাইন নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে, তারা মনোবিদ নিয়োগের বাধ্যবাধকতা শুরু করেছেন। কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘‘করোনার সময় থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মনোবিদ নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ পূরণ করেছে।’’
পাবনার মানসিক হাসপাতালে
পাবনা মানসিক হাসপাতালে শুধুমাত্র ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা প্রবণতার বিষয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থা গুরুত্বর না হলে অর্থাৎ ভর্তি না হলে সাধারণ কোনো মানুষ সেখানে গিয়ে কাউন্সিলিং করাতে পারেন না। হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ আবুল বাশার মোঃ আছাদুজ্জামান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘‘আমরা যে রোগীদের ভর্তি করি তাদের নিয়েই শুধু কাজ করি। আমাদের তো জানা থাকে না কাদের এই প্রবণতা আছে। কাউন্সিলিংয়ের সময় তাদের পরিবারের সদস্যরা আমাদের তথ্য দেন। এরপর আলাদাভাবে তাদের ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ মানুষ আমাদের এখানে ওইভাবে আসেন না।’’
৯৯৯’র লড়াই
আত্মহত্যা করতে যাওয়া মানুষদের রক্ষা করতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯‘র সাহায্য নেয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালে আত্মহত্যার চেষ্টা অথবা আত্মহত্যা কেউ করেছে এমন ঘটনার ২৪২০টি ফোনকল রিসিভ করে বিভাগটি। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে পুলিশ বাঁচাতে পেরেছে, অনেক ক্ষেত্রে আবার পারেনি। ২০২০ সালে এই কলের সংখ্যা ছিল ১৪৯৮।
সেবা বিভাগটির প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মাদ তবারক উল্লাহ ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, তারা মূলত জরুরি মুহূর্তে পদক্ষেপ নেন। অর্থাৎ কেউ আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন এমন খবর পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। কাউন্সিলিংয়ের জন্য তাদের কোনো কর্মসূচি নেই।
৯৯৯’র প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কল সেন্টারের কর্মীরা জরুরি ফোনের অপেক্ষায় সব সময় সচেতন। আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো ব্যক্তির বন্ধু কিংবা স্বজনেরাই মূলত তাদের বেশি ফোন করেন।
‘‘আমাদের এখানে ডেডিকেটেড কাউন্সিলর নেই’’,‘ জানিয়ে তবারক উল্লাহ বলেন, ‘‘যিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে আমরা ওই মুহূর্তে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করি। এজেন্টদের বলা আছে, তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি ব্যাকএন্ডে তাকে রেসকিউর ব্যবস্থা করা হয়। তার ফোন নম্বর পেলে ফোন দিয়ে আমরা কথা বলার চেষ্টা করি। এই সময়টুকুতেই আমরা তাকে ব্যস্ত রাখি।’’
'কান পেতে রই'-এর নিঃসঙ্গ যাত্রা
আত্মহত্যা প্রবণ মানুষদের হেল্পলাইনের মাধ্যমে সাহায্য দেয়া বেসরকারি সংগঠন ‘কান পেতে রই’-এর প্রশংসা করেন মনোবিদ মোহিত কামাল এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ। দুজনই বলেন, সংগঠনটি ভালো সেবা দিচ্ছে।
সংগঠনটির ফেসবুকে দাবি করা হয়েছে,কান পেতে রই বাংলাদেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন। হেল্পলাইনের মূল উদ্দেশ্য মানুষের হতাশা, একাকীত্ব, মানসিক চাপ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা, তাদের মানসিক সমর্থন জোগানো।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এর উদ্যোক্তা ইয়েশিম ইকবাল। তিনি শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবালের মেয়ে। ২০১৩ সালে তিনি সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করেন। ইয়েশিম ইকবাল বিদেশে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। চিফ অব ভলান্টিয়ার ম্যানেজমেন্ট আয়েশা সিদ্দিকি জানান, তাদের সঙ্গে কোনো মনোবিদ নেই। প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে ফোনে রোগীদের তারা কাউন্সিলিং করেন। প্রতিদিন ২৫-৩০টি ফোন আসে তাদের কাছে। তাদের সেবা নিতে এই নম্বরগুলোতে ফোন করতে হবে: ০১৭৭৯৫৫৪৩৯১, ০১৭৭৯৫৫৪৩৯২, ০১৬৮৮৭০৯৯৬৫, ০১৬৮৮৭০৯৯৬৬,০১৯৮৫২৭৫২৮৬, ০১৮৫২০৩৫৬৩৪। শুক্রবার থেকে বুধবার দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত এখানে ফোন করা যায়।