অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ: জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি জানালো তরুণ জলবায়ু কর্মীরা


 গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪।
গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪।

জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) চলমান গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে অংশ নিয়ে এ আহবান জানান তারা।

রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ’র যুব প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাক্টিভিস্টা বাংলাদেশ’-এর সহযোগিতায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থা, ব্যাংক ও বেসরকারি সেক্টরের কাছে এই আহবান জানানো হয়।

সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শিক্ষা ভবন প্রদক্ষিণ শেষে, শহীদ মিনারে সমবেত হন পাঁচ শতাধিক জলবায়ু কর্মী। সেখানে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন কার্যক্রমের সমাপ্তি টানেন তারা।

সমাবেশে আন্দোলনকারীরা টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর ও ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানান।

জলবায়ু কর্মীরা বলেন, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে ধ্বংস করছে।

“পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে উন্নত দেশগুলো;” বলেন জলবায়ু কর্মীরা।

উন্নত দেশগুলোর কাছে মানুষের চেয়ে মুনাফা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তারা। বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র এবং জলবায়ুকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোর ওপর।

এই পরিস্থিতি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এই অবস্থায়, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহবান এসেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে।

তরুণ জলবায়ু কর্মী ফাহিদা সুলতানা বলেন, “আজ আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবিতে লড়াই করছি। বিত্তবানদের মুনাফা-ক্ষুধার মানসিকতা আমাদের ব্যথিত করছে।এই লোভ ও স্বার্থের জন্য আমাদের ভবিষ্যত সংকটে ফেলতে পারি না। তাই আমরা টেকসই ও নিরাপদ পৃথিবীর দাবিতে একত্র হয়েছি।”

তরুণ জলবায়ু কর্মীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ইয়াং পিপল টিম লিড মো. নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, “আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন অবসান করা এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ও জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বাড়ানোয় প্রাধান্য দেয়ার দাবিতে আওয়াজ তুলছি। আমরা এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি, যেখানে কোনো লোভ এই পৃথিবী ও তার মানুষের মঙ্গলকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না।”

জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য উত্তরের দেশগুলোর কাছে দায়বদ্ধতা নিয়ে টেকসই সবুজ বিশ্ব রূপান্তরে প্রযুক্তি ও সম্পদ বিনিময় করার আহবান জানান তিনি।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “বৈশ্বিক যুব-নেতৃত্বাধীন জলবায়ু আন্দোলনে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা সারাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মী ও তাদের প্ল্যাটফর্মদের সহায়তা করে আসছে।”

“যেহেতু বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। সেহেতু জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ ও টেকসই সবুজায়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি জানাই;” যোগ করেন ফারাহ্ কবির।

তিনি আরো বলেন “একইসাথে আমরা ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির আহন এবং চলমান নৃশংস যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাই। আমরা তরুণদের সঙ্গে একসাথে আরো ন্যায্য, জলবায়ু-বান্ধব এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান রাখতে চাই।”

জলবায়ু সংকট নিরসনে ন্যায়বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও অ্যাক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ২০টি সংগঠনের পাঁচ শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী এই স্ট্রাইকে অংশ নেয়।

XS
SM
MD
LG