র্যাব এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খবরে বাংলাদেশে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, "র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দুঃখজনক। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার প্রধানকে যুক্ত করা যুক্তরাষ্ট্রের একটা নতুন ঢং।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ ইচ্ছা করলেই ক্রসফায়ার বা গুলি করতে পারে না।" র্যাবের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, র্যাব কখনো মানবাধিকার লংঘন করেনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "যারা মানবাধিকার লংঘন করে তাদের এ পরিণতিতে পড়তে হয়।" দলটির আরেক নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, "এ নিষেধাজ্ঞা লজ্জাজনক।"
বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্যে শনিবার দিনভর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন অনেকে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা।
মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। এরইমধ্যে তার আমেরিকান ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে ডেকে নেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। প্রায় এক ঘণ্টা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আর্ল মিলারের কাছে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব।
ওদিকে, রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, "নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে অফিসিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তবে আমরা বলবো, র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, র্যাব মানবাধিকার রক্ষা করে চলেছে। তিনি বলেন, মাত্র ৯ হাজার সদস্যের র্যাব যে মানবিকতা দেখিয়েছে পৃথিবীতে অন্য কোনো বাহিনীর এমন নজির নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অফিসারসহ র্যাবের ২৮ জন প্রাণ দিয়েছেন, এক হাজারের মতো সদস্য পঙ্গু হয়েছেন।"