ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানী দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
জয়সওয়াল বলেন, নিরাপত্তার কারণে খুব অল্প সময়ের নোটিশে শেখ হাসিনা ভারতে চলে এসেছিলেন, এখনো আছেন।
শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, নাকি অন্য কোনো দেশে গেছেন, তা নিয়ে বাংলাদেশে কিছু দিন ধরেই জল্পনাকল্পনা চলছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন। ভারত সরকার তার ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করেছে। এ বিষয়ে সত্যটা কী, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন কি না, সাংবাদিকেরা সেই প্রশ্ন করেন ব্রিফিংয়ে।
জবাবে জয়সওয়াল বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে চলে আসার বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল, নিরাপত্তার কারণে অল্প সময়ের নোটিশে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। এখনো আছেন (কন্টিনিউজ টু বি)।”
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকেরা তাকে একাধিক প্রশ্ন করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাদের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের মনোভাব কী জানতে চাওয়া হলে রণধীর জয়সওয়াল শুধু বলেন, তারা এই বিষয়ে প্রতিবেদন দেখেছেন। এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চসহ ৮টি জাতীয় দিবস বাতিলের যে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণ করেছে, সে সম্পর্কেও ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেননি।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসাপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়নি। স্বাভাবিকতা ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, জরুরি প্রয়োজন ও চিকিৎসা–সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সীমিত আকারে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হলে এবং পরিস্থিতি অনুকূল হলে ভিসাপ্রক্রিয়ারও উন্নতি হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সে দেশে (বাংলাদেশ) সংখ্যালঘুদের ওপর, হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ও দুর্গাপূজার মণ্ডপে ভাঙচুরের বিরুদ্ধে ভারত বিবৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তখন সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার আশ্বাস দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি তাদের পালন করা দরকার।
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই-অগাস্ট 'গণহত্যার' বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পৃথক দুটি আবেদনের প্রেক্ষিতে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বৃহস্পতিবার সকালে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ প্রমুখ। পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই–অগাস্টে তাঁদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
এই অপরাধগুলো বিস্তৃত মাত্রায়, সারা বাংলাদেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
গ্রেফতারি পরোয়ানা সাপেক্ষে হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ
এদিকে ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এইমাত্র এটা জানতে পেরেছি। আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করব।”
তিনি বলেন, তাদের হাতে এক মাস সময় আছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”