একবিংশ শতাব্দীতে এসে নতুন এক আতংক বদলে দিয়েছে জীবনযাপনের ধারা। পৃথিবীর মানুষ যখন সামনের দিকে অগ্রসর হতে ব্যাতিব্যস্ত ঠিক তখনি গতি রোধ করে দিল কোভিড-১৯ নামক ভাইরাস। এটি এমন এক ভাইরাস যে কোনো বয়স মানে না, জাত মানে না, সীমানা মানে না।
এই ভাইরাসের ছোবলে এখন পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ গৃহবন্দী। কেউ আছেন নিজ গ্রিহে কেউ আছেন হাসপাতালে। অজানা অচেনা এক লড়াই করে চলেছেন এক দল তাজা প্রাণ।
ইতালির মিলান শহরের এক হাসপাতালের নার্স দ্যানিয়েলা কনফালোনিরি। তিনি জানাচ্ছিলেন, ঐ হাসপাতালের অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসে আক্রান্ত। যারা সুস্থ আছেন তারা অন্যান্য করোনা রোগীদের দেখভালের কাজ করছেন। কিন্তু তারাও আর পেরে উঠছেন না। সবাই ক্লান্ত। কিন্তু ওদিকে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।
দ্যানিয়েলা কনফালোনিরি বলেন, আমরা অত্যন্ত চাপ এবং উত্তেজনার মাঝে কাজ করছি। মানসিক উত্তেজনা অতিরিক্ত মাত্রায় অনুভব করছি আমরা।দুর্ভাগ্যবশত লম্বার্দিতে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারছিনা। সংক্রমণে হার অনেক বেশী। এবং আমরা এখন জানিনা ঠিক কতজন মারা গেছেন। গণনা করা বন্ধ করে দিয়েছি।
একদিনে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭৫। ইতালির ঘন বসতি শহর লম্বারদির পরিস্থিতি সবচাইতে খারাপ।
এদিকে, করোনা সাগর পারি দিয়ে নিউইয়র্কে এসেছে অনেক আগে। এক স্বাস্থ্যকর্মী দম্পতি যখন চীনে গিয়েছিলেন সেখানে সাহায্য করতে তখন তাদের শরীরে লুকিয়ে ছিল কোভিড-১৯। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিউইয়র্কের চিত্র পাল্টে গেলো। চার হাজারের ও বেশী মানুষ আক্রান্ত, মারা গেছে ২২জন।সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বিল ডি ব্লাযিও বলছেন, এই মুহূর্তে দরকার মানুষের ঘরে থাকা। ঘরে থাকলে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়াবেনা। চিকিৎসা সামগ্রী ফুরিয়ে যাবার বিষয়ে উদ্বিগ্ন মেয়র ব্লাযিও।
নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাযিও বলেন,আমি এই চিঠি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছি। বার বার তাকে অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদের কি কি সরঞ্জাম প্রয়োজন এই ভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ আমাদের তিরিশ লক্ষ এন-নাইন্টি ফাইভ মাস্ক, ৫ কোটি সার্জিকাল মাস্ক পনের হাজার ভেন্টিলেটর প্রয়োজন।
পরিস্থিতি প্রতিদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কেউ বলতে পারছেন না এর শেষ কোথায়। ভাইরাস রোধ করতে বিভিন্ন রাজ্যের কর্তাব্যক্তিরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বার, রেস্তোরা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিনোদনের স্থানগুলো সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এই নির্দেশের দরুন চাকরি হারিয়েছেন অনেকে।
ওয়াশিংটন ডিসির একটি পাবে কাজ করতেন কাইল জ্যাকসন। সামাজিক দুরুত্ত বজায় রাকার নির্দেশ আসার পর সে পাব বন্ধ করে দেয়া হয়।
নয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে কাইলের। ঐ পাব ছাড়া আরেকটি রেস্তরাঁতে খণ্ডকালীন কাজ করেন কাইল। একটি ফুটবল ক্লাবে প্রশিক্ষকের কাজ ও করেন। তাঁর ভাবনা, বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর জন্য অন্য দুটি চাকরিও তাঁর চলে যেতে পারে।
কাইল জ্যাকসন বলেন,এর শেষ কিভাবে হবে?আমার জন্য এটি সবচাইতে ভয়ের ব্যাপার। এটা কি দুই সপ্তাহের একটি সাময়িক অর্থনৈতিক ধাক্কা? নাকি সত্যিকারের মন্দার দিকে যাচ্ছি আমরা?
ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট এসোসিয়েশন জানিয়েছে আগামি তিন মাসে, বাইশ হাজার পঞ্চাশ কোটি ডলারের লোকসান গুনতে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টগুলো।
জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টোনিয়ও গুতেরেস বলছেন জাতিসংঘের ৭৫বছরের ইতিহাসে এ ধরণের বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট আগে দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, সমন্বিত বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী কয়েক লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারে।আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, "আমরা যদি ভাইরাসটিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে দিই, বিশেষত বিশ্বের সবচেয়ে দূর্বল অঞ্চলগুলিতে, তাহলে এটি লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করবে।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে এ পর্যন্ত দুই লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং আট হাজার মানুষ মারা গেছে।এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করতে বিশ্বের নেতারা জনগণকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলছেন এবং ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।