বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ ছিল রাজনৈতিক উত্থান আর পতনের বছর, যার প্রভাব ক্রীড়া জগতের উপড়েও পড়ে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার, সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ক্রিকেট কেরিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সাকিব ২০২৪ সালে খেলার পাশাপাশি ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে হত্যা মামলা। তিনি তার আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন।
দেশের মাটিতে খেলার সময় তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে কিনা, সেটা নিয়ে তৈরি হয় উদ্বেগ। সাকিব অবসর নেবার আগে একটি টেস্ট দেশে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে অস্পষ্টতার কারণে সেটি আর খেলা সম্ভব হয়নি।
টি-২০ বিশ্বকাপ
গত জুন মাসে বাংলাদেশ দল টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নেয়। সেটি অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে যৌথভাবে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের যাত্রা। দলে পুরোনোদের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নতুনদের ওপর ভরসা বাড়ানোর চেষ্টা ছিল। অভিজ্ঞ মুস্তাফিজের পাশাপাশি তাসকিন এবং তানজিব সাকিবের বোলিং সাফল্য দর্শকদের মনোযোগ পায়।
দলে দীর্ঘকাল ধরে একজন লেগ স্পিনারের অভাব পূরণ করেন নবাগত রিশাদ হোসেন। প্রথম ম্যাচেই তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে ম্যান অফ ম্যাচ পুরস্কার জেতেন।
ব্যাটিং-এ বাংলাদেশের টপ অর্ডারের পারফরম্যান্স সুবিধা করতে পারেনি। নেপাল এবং নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে জয় পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হার মানে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য ছিল কষ্টকর অভিজ্ঞতা।
তবে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজে স্বাগতিক দলকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশ দল উজ্জীবিত হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ কখনই পাকিস্তানে এমন সাফল্য পায়নি।
প্রথম টেস্টে ওপেনার শাদমানের ৯৩ আর অভিজ্ঞ মুশফিকের ১৯১ রান দলকে ৫৬৫ রানের পাহাড় গড়তে সাহায্য করে। দ্বিতীয় টেস্টেও লিটন দাশের শতক আর মেহেদি হাসান মিরাজের দারুণ বোলিং পাকিস্তানকে ওয়াইট ওয়াশ করতে ভূমিকা রাখে।
আন্তর্জাতিক মানের বোলিং
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ঈউসুফ রহমান বাবুর মতে "বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাক আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে শক্তিশালী। পীচ সামান্য অনুকূল হলে বাংলাদেশের বোলাররা বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। এটা তারা প্রমাণ করেছে। কিন্তু আমাদের ব্যাটিং-এ উন্নতি করতে হবে।"
বাংলাদেশ বছর শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-২০ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয় দিয়ে। এই জয়ের পেছনে বরাবরের মতই বাংলাদেশের বোলাররা বড় ভূমিকা রাখেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে টেস্ট সিরিজ ড্র করলেও ওয়ান ডে সিরিজে অবশ্য বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে হেরেছে।
বাংলাদেশ দলের দুই তরুণ সদস্য জাকের আলী এবং শামীম হোসেনের আগ্রাসী ব্যাটিং নতুনদের সম্ভাবনা প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের পেস অ্যাটাকে পুরোনোদের সাথে যোগ হয়েছে নাহিদ রানা। সিলেটের ২২ বছরের এই তরুণের বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয় শ্রীলংকার বিরুদ্ধে। তার বলের গতি ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে যা বাংলাদেশের পেস অ্যাটাককে নিঃসন্দেহে শক্তিশালী করেছে।
নারী ফুটবলে সাফল্য
ফুটবলে সাফল্য এসেছে বাংলাদেশ নারী দলের কাছ থেকে। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে হাজার হাজার নেপালী দর্শকের সামনে বাংলাদেশের নারী দল স্বাগতিকদের কাছ থেকে সাফ চাম্পিয়নশীপ শিরোপা জয় ছিনিয়ে নেয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাংলাদেশের মনিকা চাকমা গোল করে দলকে এগিয়ে নিলেও চার মিনিটের মধ্যে নেপাল সমতা ফিরিয়ে আনে। কিন্তু নেপালের জন্য অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশের ঋতুপর্ণা চাকমার এক বিষ্ময়কর লং শট। লেফট উইং থেকে তার বাম পায়ের জোরালো শট নেপালের গোল কিপারের মাথার ওপর দিয়ে জালে প্রবেশ করলে বাংলাদেশ পরপর দ্বিতীয়বারের মত সাফ চাম্পিয়নশীপ শিরোপা জেতে।