ইরান রবিবার জানিয়েছে যে, তারা আসন্ন দিনগুলোতে সেই তিনটি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা করবে যারা জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্বারা গৃহীত একটি নিন্দা প্রস্তাবের সূচনা করেছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমায়েল বাঘাই কোনো স্থান নির্দিষ্ট না করেই বলেন, শুক্রবার ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে মুখপাত্র বলেন, "ফিলিস্তিন ও লেবাননের পাশাপাশি পারমাণবিক বিষয় সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। "
বাঘাই আসন্ন বৈঠকটিকে সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের সময় পার্শ্ব বৈঠকে দেশগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনার ধারাবাহিকতা হিসেবে উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার ৩৫ টি দেশের গভর্নর বোর্ড ইরানের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভাবের অভিযোগ এনে একটি নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করে।
এই পদক্ষেপটি এসেছে যখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমালোচকদের আশংকা কর্মসূচিটির লক্ষ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি। কিন্তু, তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।
পদক্ষেপটি আবার আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি তেহরান সফর থেকে ফিরে আসার পর নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সফরের সময় ইরান অস্ত্র উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত মানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধতা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সংবেদনশীল মজুদ সীমাবদ্ধ করার জন্য আইএইএ-এর দাবিতে সম্মত হয়।
প্রস্তাবের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইরান ঘোষণা করে তারা এক রাশ "নতুন এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ" চালু করছে।
সেন্ট্রিফিউজগুলি গ্যাসে রূপান্তরিত ইউরেনিয়ামকে অত্যন্ত উচ্চ গতিতে ঘুরিয়ে তার মধ্যে ফিসাইল আইসোটোপ (ইউ-২৩৫)-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি রাষ্ট্রীয় মাধ্যমকে বলেন, "আমরা বিভিন্ন ধরনের উন্নত মেশিন ব্যবহার করে সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করব।"
তবে দেশটি এটাও বলেছে, তারা আইএইএ-এর সাথে তাদের "প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা" চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
'সন্দেহ ও অস্পষ্টতা'
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জুলাই থেকে ক্ষমতায় আছেন এবং তিনি পশ্চিমা দেশগুলির সাথে সংলাপের সমর্থক। তিনি বলেন, তিনি তার দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে "সন্দেহ ও অস্পষ্টতা" দূর করতে চান।
ইরান এবং বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো ২০১৫ সালে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যাতে তেহরানের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে নিজেকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করে। ফলে ইরান তাদের অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করে।
তেহরান ২০২১ সাল থেকে পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজরদারি করার ডিভাইসগুলি নিষ্ক্রিয় করেছে এবং জাতিসংঘের পরিদর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে আইএইএ-র সাথে তার সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে।
একই সময়ে, তারা তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ এবং সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৬০ শতাংশে বৃদ্ধি করেছে।
আইএইএ-এর মতে, এই স্তরটি পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ৯০ শতাংশেরও বেশি মাত্রার কাছে এবং ২০১৫ সালে সম্মত হওয়া ৩.৬৭ শতাংশ সীমার থেকে অনেক বেশি।