অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

র‍্যাব আর গুম-খুনের সাথে 'জড়াবে না,' বলছেন পুলিশের বিশেষ বাহিনীর প্রধান


বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) গুম-হত্যার মত 'ঘৃণিত' কাজ থামিয়ে দেবে। ফাইল ফটো।
বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) গুম-হত্যার মত 'ঘৃণিত' কাজ থামিয়ে দেবে। ফাইল ফটো।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ভবিষ্যতে আর কখনো গুম বা হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না বলে র‍্যাব মহাপরিচালক একেএম শহীদুর রহমান জানিয়েছেন।

সোমবার (৭ই অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে র‍্যাব কার্যালয়ে এক বৈঠকে তিনি এ কথা জানান।

"আমাদের গুম-খুন করার প্রশ্নই আসে না। আমরা এটা অন্যায় কাজ হিসেবেই দেখি," র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন।

র‍্যাব প্রধান বলেন, র‍্যাবের দায়িত্ব “অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা, অস্ত্র-মাদক উদ্ধার করা, জঙ্গিবিরোধী অভিযান।” এই কাজগুলো করার ক্ষেত্রে কাউকে ধরে এনে গুম বা খুন করার দরকার হয় না বলে জানান রহমান।

র‍্যাব বিলুপ্তির দাবী

এর আগে বাংলাদেশের সরকার পতনের পরে অগাস্টেই নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‍্যাবকে বিলুপ্ত করার দাবি জানায়।

মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে র‍্যাব বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে, "বিগত সরকারের সময় র‍্যাব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল এবং এসব ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের দায়মুক্তি ছিল"।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারের অধীনে ২০০৪ সালে র‍্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে যতগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর তদন্ত করার আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

র‍্যাব মহাপরিচালক সোমবার ক্রাইম রিপোর্টারদের সংগঠন ক্র‍্যাবের সাথে বৈঠকে বলেন, "র‍্যাব এই ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হবে না। জোরপূর্বক গুম, খুন, কাস্টোডিয়াল ডেথ—এসব আমরা ঘৃণা করি।"

ফাইল ফটোঃ ঢাকায় ২০১২ সালে ধর্মঘট চলাকালে পাহার দিচ্ছেন বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যরা।
ফাইল ফটোঃ ঢাকায় ২০১২ সালে ধর্মঘট চলাকালে পাহার দিচ্ছেন বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যরা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‍্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ওই কর্মকর্তারা হলেন র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান। তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী।

কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG