আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমাদের অবশ্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিত। সেদিকেই আমরা যাব।
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে পুরো আইন বাতিল করা হবে, নাকি কেবল স্পিচ অফেন্স বাতিল করা হবে, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। কিন্তু আলটিমেটলি এটা বাতিল হবে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তীকালে যখন নতুন আইন করা হবে, তখন তার মৌলিক একটি অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সাইবার সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে অবশ্যই নারী ও শিশুদের স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে তাদের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। সেজন্য এরকম সেমিনার অব্যাহত রাখা হবে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ সংশোধন বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তবে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল জানান ইতিমধ্যেই সাইবার নিরাপত্তা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, "অনেকেই বলে থাকেন ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের মামলাগুলো কেন প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। এর উত্তরে তিনি বলেন, মামলায় যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়ে যায়, যত ভুয়া মামলাই হোক, চাইলেই তা প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। এ জন্য একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।"
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি (যা পরে সাইবার নিরাপত্তা আইনে পরিণত করা হয়েছে) মূলত অপ্রয়োগের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে এর প্রতি মানুষের একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তাই এই আইনকে আমরা যতভাবেই সংশোধন করি না কেন, এর প্রতি মানুষের অনাস্থা থেকে যাবে। তাই আলোচনা সভার যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনাগুলোকে আমলে নিয়ে এবং আরও যেসব বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করা প্রয়োজন তা বিচেনায় নিয়ে নতুনভাবেই আইনটি করা উচিত।
চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রেখে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পাস হয় সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩। বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ১৪টি ধারা জামিন অযোগ্য ছিল।
২০০৬ সালের আইসিটি আইন, ২০০৯ সালে নাম ঠিক রেখে সংশোধিত হয়। এরপর ২০১৮ সালে নাম বদলে হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই ধারাবাহিকতাতেই সাইবার নিরাপত্তা আইন ওই আইনের সর্বশেষ রূপ।
'সাইবার নিরাপত্তা বিল' জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়ার পর হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলে, দুর্ভাগ্যবশত, সাইবার নিরাপত্তা আইন অনেক দিক দিয়েই এর আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো।
২০২৩-এর ১৪ সেপ্টেম্বর বিলটি নিয়ে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, “নতুন আইনটির আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার অংশীজনদের এটি পর্যালোচনা এবং তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করার পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এই আইনেও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, জামিন অযোগ্য ধারা বহাল রাখা হয়েছে এবং সমালোচকদের গ্রেফতার, আটক ও কণ্ঠরোধ করতে খুব সহজেই এর অপব্যবহার হতে পারে।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ বছরের ৮ অগাস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার জন্য সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল বা উল্লেখযোগ্যভাবে সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছে।