অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শেখ হাসিনা ও ২৮ সাংবাদিকসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে 'গণহত্যায়' উসকানির অভিযোগ


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে "গণহত্যায়" উসকানির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ২৮ সাংবাদিকসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শ্যামলীতে নিহত মিরপুর বিসিআইসি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র নাসিব হাসান রিয়ানের (১৭) বাবা আব্দুর রাজ্জাক বৃহস্পতিবার (২৯ অগাস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ দাখিল করেন।

বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাদের "সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যে" তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই সংবাদিক সম্মেলনে আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য "প্ররোচনা ও উসকানিমূলক" বক্তব্য দেন।

অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতা কর্মীদের আন্দোলনকারীদের "সমূলে বা আংশিক নির্মূল" করার নির্দেশনা দেন, যা বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি পত্রপত্রিকা ও টিভি নিউজে প্রকাশিত হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের 'দোসর' ও 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিয়ে "উসকানিমূলক" প্রশ্ন করেন। তারা শেখ হাসিনাকে "উৎসাহিত" করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

অভিযুক্ত সাংবাদিকেরা হলেন- ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ফরিদা ইয়াসমিন, শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু, নবনীতা চৌধুরী, সুভাষ সিংহ রায়, আহমেদ যোবায়ের, তুষার আব্দুল্লাহ, সাইফুল আলম, নঈম নিজাম, আবেদ খান, প্রভাষ আমিন, ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, মিথিলা ফারজানা, জায়েদুল আহসান পিন্টু, মঞ্জুরুল ইসলাম, আশীস সৈকত, মানষ ঘোষ, প্রণব সাহা, মাসুদা ভাট্টি, মুন্নি সাহা, জ ই মামুন, স্বদেশ রায়, সোমা ইসলাম, শ্যামল সরকার, অজয় দাশ ও নাঈমুল ইসলাম খান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকেনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ ছাড়া, মামলায় কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর উদ্বেগ

এর আগে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করে। আহমেদ একাত্তর টিভির প্রাক্তন বার্তা প্রধান এবং রুপা একই চ্যানেলের প্রাক্তন মুখ্য সংবাদদাতা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এক ইমেইলের মাধ্যমে বলেন, “এটা খুবই উদ্বেগজনক যে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিচার ব্যবস্থা তাদের পক্ষপাতদুষ্ট এবং অবমাননাকর ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি করছে। স্বেচ্ছাচারমূলক গ্রেফতার এবং আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তারা শুধুমাত্র লক্ষ্যবস্তু পরিবর্তন করেছে।”

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের সময় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকা যুক্তিসঙ্গত, কিন্তু মনোযোগ রাখতে হবে প্রতিশোধ নয়, সংস্কারের দিকে। প্রতিশোধ অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

এ ছাড়া, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জারনালিস্টস (সিপিজে) এক বিবৃতিতে আহমেদ ও রুপাকে গ্রেফতার করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।

সিপিজে ২১ অগাস্ট (বুধবার) সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এক বার্তায় বলে, “আমরা কর্তৃপক্ষর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি রিপোর্টারদের অধিকার সম্মান করার জন্য, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের সাংবাদিকতার প্রতিশোধ হিসেবে আনা যেকোনো তদন্ত বন্ধ করার জন্য।”

৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ লক্ষ্য করে। অন্তত সাতটি টেলিভিশন স্টেশন এবং সংবাদপত্রের অফিস আক্রমণের শিকার হয়।

জাতিসংঘের বক্তব্য

এদিকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার‍ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, “সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যেসব দেশ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “সাংবাদিকেরা যাতে কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা এবং যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত হয় তাদের জবাবদিহি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সাংবাদিক দম্পতির গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনা আসে যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য খাতের প্রধানদের বদল করে পুনর্গঠনের কাজ করছেন।

ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার ৮ অগাস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ১ হাজার ৮০০–র বেশি নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে অপসারণ করা হয়েছে। হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাবার পর রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত করে দেন।

জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে বলেছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় এবং তার পরের সহিংসতায় ৬৫০ এর বেশি মানুষ প্রাণ হারান। রিপোর্টে বলা হয়, প্রায় ৪০০ জন মারা যান ১৬ জুলাই থেকে ৪ অগাস্টের মধ্যকার সময়ে। নতুন দফার সহিংসতায় আরও ২৫০ জন নিহত হন হাসিনার পতনের পর, ৫ ও ৬ অগাস্ট।

(এই রিপোর্টের জন্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে)

XS
SM
MD
LG