অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শেখ হাসিনাকে আসামি করে 'শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড' নিয়ে নতুন মামলা


বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটোঃ ৮ জানুয়ারি, ২০২৪।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটোঃ ৮ জানুয়ারি, ২০২৪।

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বামপন্থী রাজনিতিক রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে “নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার” অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী রবিবার (১৮ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল-ফারাবীর আদালতে এ মামলা করেন। বাদীর জবানবন্দি নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে মতিঝিল থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ব্লগারদের “ধর্মীয় অবমাননা ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির” প্রতিবাদে হেফাজত ইসলাম ১৩ দফা দাবি জানায়। সরকার দাবি না মানায় ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে দাবি আদায়ের জন্য অবস্থান নেয় তারা।

বাদী আরও বলেন, “সেদিন রাত ১১টা থেকে ৬ মে ভোর ৪টা পর্যন্ত রাস্তা ও বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র ও পথচারীদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে লাশগুলো অজ্ঞাত স্থানে গুম করে ফেলা হয়।”

৫ মের ঘটনা

হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি পালন করার পর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি চায়। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়ার পর হাজার হাজার হেফাজত কর্মী ঢাকায় প্রবেশ করে, কিন্তু দুপুরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউ, বাইতুল মোকাররাম, তোপখানা রোড ইত্যাদি এলাকায় হেফাজত কর্মী এবং পুলিশ আর আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে।

গুলিবর্ষণ, ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগের ফলে ঢাকার কেন্দ্রস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

তবে শাপলা চত্বর, যেখানে হেফাজত কর্মীরা বিকেলের মধ্যে সমবেত হয়, শান্তিপূর্ণ থাকে। সমাবেশে নেতারা তাদের অবস্থান চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়ার পর সরকার হেফাজতকে রাত বারোটার মধ্যে শাপলা চত্বর ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়।

রাত বারোটার পর পরই পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে পুলিশ এবং র‍্যাপিড অ্যাকষন ব্যাটালিয়ন কয়েক ঘণ্টার অভিযানে হেফাজত কর্মীদের একদিকে নারায়ণগঞ্জ, অন্যদিকে কমলাপুর স্টেশনের দিকে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা ফাঁকা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যাবহার করে।

মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট

পরবর্তীতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তদন্তে ৫ এবং ৬ মে ঢাকা, নারায়ানগঞ্জ, চট্টগ্রামের হাটহাজারি এবং বরগুনায় সংঘর্ষে অন্তত ৫৮ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর রিপোর্টে ৬১ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর রিপোর্টে ৫৮ জনের মৃত্যুর হিসেব দেয়া হয়। তবে এই মৃত্যুগুলোর কোনোটা রাত বারোটায় শাপলা চত্বরে হয়েছিল কি না, তা অস্পষ্ট রয়ে যায়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহাবুব খন্দকার, তৎকালীন র‌্যাবের প্রধান এ কে এম শহিদুল হক, তৎকালীন ডিসি মোহাম্মদ বিপ্লব কুমার সরকার, মতিঝিল থানার তৎকালীন ওসি ওমর ফারুক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনসুর আহমেদ ও মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল হক হিরণ।

(এই রিপোর্টের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে)

XS
SM
MD
LG