বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “দূর্ভাগ্যজনকভাবে পতিত সরকারের দেশি ও বিদেশি চক্র আমাদের শান্তিপ্রিয় এই দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে চায়; তাদের যে ত্যাগ, সে ত্যাগকে ধুলিস্যাত করতে চায়। তাদের একটা চক্র পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে মাইনরিটি (সংখ্যালঘু) নির্যাতনের একটা অলীক কাহিনী প্রচার করে চলেছে।”
বুধবার (১৪ অগাস্ট) সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে কালিবাড়ির নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি ঠাকুরগাঁওয়ে আসার পর সদর উপজেলার গড়েয়া ও রুহিয়ায় জনসভা করেছি। জেলার যে ইসকন মন্দির রয়েছে, আমি তার প্রধান পুরোহিতের (মহারাজা) সঙ্গে কথা বলেছি। আমার সঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের লোকেরা ছিল। আমি আগেও জেনেছি, তারপরও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে খোঁজার ও জানার চেষ্টা করেছি।”
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে যে গোলযোগ হয়েছে তা পলিটিকাল (রাজনৈতিক) গোলযোগ। ৫ তারিখের এটা ছিল পুরোটাই পলিটিকাল গোলযোগ। এটা রিলিজিয়াস (ধর্মীয়) কোনো সম্প্রদায় বা কোনো ধর্মীয় গোলযোগ ছিল না। ৫ তারিখের পর এখানে এমন কোনো ইনসিডেন্ট (ঘটনা) হয়নি যেটার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, এখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে বা হচ্ছে। একটি চক্র, অর্থাৎ পতিত যে সরকার তাদের লোকেরাই পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ঘটনার নাটক সাজিয়ে এটাকে প্রচার করছে।”
আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করে এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি স্মরণ করতে চাই সেসব বীর শহীদদের, যারা এই ভয়াবহ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আন্দোলনে শাহাদাত বরণ করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ঠাকুরগাঁওয়ের বীর ছাত্র-জনতাকে, যারা ঠাকুরগাঁওয়ের আন্দোলনে তাদের সামগ্রিক একটা ভূমিকা রেখেছেন। ধন্যবাদ জানাতে চাই সাংবাদিক মহলকে, যারা ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছেন। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন।”
বালিয়াডাঙ্গির হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেদের দেশ ত্যাগ নিয়ে তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গিতে মাইনরিটির লোকেরা পালিয়ে চলে যাচ্ছে বলে তিন-চারশ লোককে একসঙ্গে জড়ো করেছে। প্রশাসনের কাছ থেকে, গোয়েন্দাদের কাছ থেকে আমি খুব ভালোভাবে খোঁজ নিয়েছি। তারা পরিষ্কার বলেছে, ইট ওয়াজ এ স্টেজ ড্রামা (এটা সাজানো নাটক)। কারণ ওই লোকগুলো সব খালি হাতে ছিল এবং তাদের স্ত্রী, কন্যা, সন্তান সঙ্গে ছিল না। তারা মিথ্যে বোঝাতে চেয়েছিল যে, তারা এখানে নির্যাতিত হচ্ছে, তাই এ দেশ ছেড়ে ওইপারে চলে যাচ্ছে। এই যে একটা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে তা পুরোটাই সাজানো নাটক।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা দেখেছেন আমাদের দল কীভাবে এ ঘটনাগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য পুরা জেলাতে ছুটে বেড়িয়েছে এবং এখনো তারা তা করছে।…আমাদের খুব সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের দলের কেউ এসব বিষয়ে জড়িত থাকলে প্রশাসনকে বলা হয়েছে, তারা তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবে। আমরাও দলীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেব, যা বিগত সময়ের আমরা করেছি।”
সাংবাদিক ও দেশের সর্বস্তরের মানুষকে বর্তমান সরকারের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে যে ধর্মীয় সৌহার্দ্য রয়েছে তা যেন নষ্ট না হয়, সে দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা সাংবাদিক ও দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। দয়া করে আমাদের সহযোগিতা করবেন। বর্তমান সরকারকেও আপনারা সহযোগিতা করবেন এটাই আমাদের চাওয়া।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, পৌর শাখার সভাপতি পয়গাম আলি, স্থায়ী কমিটির সদস্য আল মামুনসহ নেতাকর্মীরা।
সেনাপ্রধানের বক্তব্য
এদিকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান মঙ্গলবার (১৩ অগাস্ট) বলেছেন, বাংলাদেশের ২০ জেলায় ৩০টি সংখ্যালঘুসংশ্লিষ্ট অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদ্যাপন পরিষদের খোলাচিঠি
অন্যদিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি শুক্রবার (৯ অগাস্ট) খোলাচিঠি দেয়।
চিঠিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার সময় ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক নারী নিগৃহিত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ অগাস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চাই।”
দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের নানা স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বাংদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে প্রবাসীরা।