সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির মধ্যে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সোমবার (২৯ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি। এর মাধ্যমে আলোচনার শুরু হলো। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে; তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখানে তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। কারণ আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় আছে, আরো অন্যান্য কর্তৃপক্ষ আছে। এখানে কিছু বিষয়ে আলোচনা হবে, তার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যোগ দেন।
এর আগে, এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। কিন্তু সে বৈঠকে সমাধান না আসায় আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষকরা।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ধর্মঘট
এর আগে, ১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের 'বৈষম্যমূলক' পেনশন ব্যবস্থার আওতা থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে, বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন। এর ফলে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
এর আগে রবিবার (৩০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের প্রধান ফটকে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচির আওতায়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত, সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম, প্রফেশনাল প্রোগ্রাম, অনলাইন ক্লাস ও অফলাইন ক্লাস, প্রশাসনিক কাজ এবং সব শ্রেণীর ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
চেয়ারম্যান কার্যালয়, হল প্রভোস্ট অফিস, গবেষণা কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ডিন অফিস, কম্পিউটার ল্যাব ও সেমিনার বন্ধ রয়েছে।
একইভাবে সর্বজনীন পেনশন-সংক্রান্ত 'বৈষম্যমূলক' প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ধর্মঘট-প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষামন্ত্রী আগে যা বলেছিলেন
সর্বজনীন পেনশন (প্রত্যয়) স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শিক্ষকদের এ আন্দোলনের দিকে নজর রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথাসময়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রবিবার (৩০ জুন) রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে সেশনজটে পড়লে, মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে তারা আন্দোলন করছেন। সেই অধিকার তাদের আছে। অনেকে বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তো এটা বোঝা যাচ্ছে যে, তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন।”
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা এই বিষয়ের দিকে নজর রাখছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা পদক্ষেপ নেবো।”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় কারা আসবে, সেটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আছে। শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে জানাচ্ছেন, সরকারই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখানে আলাদা করে কিছু করার নেই।
পেনশন প্রকল্প
প্রবাসী, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা; এই চারটি প্রকল্প নিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশে। পরে সব স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য 'প্রত্যয় স্কিম' নামে একটি নতুন স্কিম চালু করা হয়।
অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে প্রত্যাবর্তনের আকর্ষণীয় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন পাওয়া তহবিলের প্রতি আস্থা না থাকায় মানুষ খুব ধীর গতিতে নিবন্ধন করছে।