অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিএনপির অভিযোগ: ‘ভারতকে রেল করিডোর প্রদান ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে মিথ্যাচার করছে সরকার’


জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১ জুলাই, ২০২৪।
জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১ জুলাই, ২০২৪।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতকে রেল করিডোর প্রদান এবং সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে সই হওয়া ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে সরকার মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

সোমবার (১ জুলাই) রাজধানী ঢাকায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এর আগে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল।

“সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্র করছে;” বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি আরো বলেন, তারা (সরকার) কখনোই বাংলাদেশের জনগণকে সত্য কথা বলেনি। তারা সব সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে।

“সম্প্রতি সই করা সমঝোতা স্মারকের অর্থ হলো; এগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করবে;” মির্জাফখরুল যোগ করেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো; সরকার যে রেল করিডোর দিচ্ছে, তা বাংলাদেশের কোনো কাজে আসবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত তাদের রেললাইনের জন্য বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করবে। সেখানে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। ভারত আকাশ, স্থল ও নৌ-পথে অংশীদারিত্ব দিয়েছে। অংশীদারিত্ব ও কানেক্টিভিটি নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। “তবে, বাংলাদেশ কি পেলো? সেটাই মূল প্রশ্ন। আমরা কিছুই অর্জন করিনি;” আরো বলেন তিনি।

বাংলাদেশ এখনো তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি আরো বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

“আমরা সমঝোতা স্মারক নিয়ে সত্য কথা বলছি। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র করছি না; বরং অবৈধ শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অন্যের মুখাপেক্ষী করার ষড়যন্ত্র করছে;’ আরো বলেন বিএনপি মহাসচিব। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সব কাঠামো ধ্বংস করে বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দেশের মানুষ এখন আইনের শাসনের অভাবে ন্যায়বিচার পাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, “আর্থিক অনটনের কারণে জনগণ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের দল সব সময় যে কোনো ধরনের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।” আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনের নামে প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও কারাগারে আটকে রাখছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

‘বিএনপি ভারতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে মিথ্যাচার করছে’, প্রতিমন্ত্রী আরাফাত

বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ভারতের ও বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের সকল ধারা না পড়ে এবং না বুঝে বিএনপি অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে। “ধারাগুলো খন্ডিতভাবে তুলে ধরে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে;” আরো বলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ১ জুলাই, ২০২৪।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ১ জুলাই, ২০২৪।

“কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। সেখানে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু মূলধারার গণমাধ্যমেও ভুল তথ্য চলে এসেছে;” যোগ করেন আরাফাত।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা দেখেছি, বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। সর্বশেষ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও যুক্ত হয়েছেন সেই অপপ্রচারে।”

“রবিবার তিনি একটি প্রেস কনফারেন্সে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো একেবারেই অসত্য এবং ডাহা মিথ্যা কথা। সমঝোতা স্মারকের সবগুলো ধারা তিনি হয়তো পড়েননি বা যারা অপপ্রচার করেছে তারাও পড়েননি। সব ধারা না পড়ে, খণ্ডিতভাবে এগুলো তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে;” তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কোনোভাবেই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং এটি উভয় দেশের জন্য লাভজনক; বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, বিএনপি অপপ্রচার করছে যে, বাংলার বুক চিরে ভারতের ট্রেন চললে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। এটা মোটেও সঠিক নয়। সমঝোতা স্মারকের ৩ নম্বর ধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, রেড ট্রাফিক তথা অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরকসহ বিপজ্জনক ও আপত্তিকর পণ্য পরিবহন করা যাবে না। সমঝোতা স্মারকের ৪ নম্বর ধারায় এটাও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য ও মানুষের চলাচল, সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় আইন, প্রবিধান এবং প্রশাসনিক বিধানের অধীনে হবে।

“বিএনপি এটা বলে না যে, ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ট্রেন নেপাল ও ভুটান পর্যন্ত চলবে। নেপাল-ভুটান থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে ট্রেন বাংলাদেশে আসবে এবং কলকাতা বন্দর ব্যবহার না করে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করবে;”প্রতিমন্ত্রী আরাফাত যোগ করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, তারা এটা বলে না যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ গ্রিডের মাধ্যমে, ভারতের ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে, ভারতের বুক চিরে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ।

গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিতে ভারতকে রাজি করিয়ে, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা শেখ হাসিনাই আদায় করেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী আরাফাত।

বিএনপির রাজনীতি ‘নতজানু’ উল্লেখ করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে বিজেপি প্রথম ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গ বিএনপি মিষ্টি বিতরণ করেছিলো। ভারতকে গ্যাস দেয়ার ‘মুচলেকা’ দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি।

প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, “আপনাদের বিবেক নতজানু, যে কারণে আপনারা নিজেরা যা করতে পারেননি, এমনকি কোনো উদ্যোগ নেননি, সেগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্জন থাকা সত্ত্বেও সমালোচনা করেন। আপনাদের সততার মানদণ্ড নতজানু, যে কারণে আপনারা ডাহা মিথ্যা কথা বলে জনগণকে প্রতিনিয়ত ধোঁকা দেন এবং বিভ্রান্ত করেন।”

XS
SM
MD
LG