বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যা সমাধানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কাছে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে জিম্মি করে ফেলেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপিপন্থী সংগঠন নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের অর্জন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অস্তিত্ব এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সই করা এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের কোনোটিই বাংলাদেশের অনুকূলে নয়।”
বিএনপি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) মধ্যে পার্থক্য বোঝে না- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমি তার কথার জবাব দিতে চাই না। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। জনগণকে বোকা বানিয়ে এবং বিভ্রান্ত করে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই করবেন না।”
ভারতের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি করে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, “ভারত থেকে এবার কী নিয়ে এসেছেন। … কোথাও পানির উল্লেখ নেই। যা উল্লেখ করা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। ভারত তিস্তা প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এবং চীনও এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুটোর মধ্যে কোনটা ভালো সেটা তিনি দেখবেন।”
তিনি বলেন, ভারতকে এই প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হলে পানি সমস্যার সমাধান হবে বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। “আমরা যারা এই দেশে বাস করছি সবাই কি বোকা? বরং আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। এভাবে আপনারা বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতের কাছে জিম্মি করে দিচ্ছেন।”
মির্জা ফখরুল সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, “গতকালও (বুধবার) একটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এবারের সফরে এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি।”
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা আছে কি না, যেখানে কোনো দেশ সীমান্তে তার বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করে।
মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এসব প্রশ্নের জবাব আপনাকেই দিতে হবে। আত্মরক্ষার্থে যা বলছেন, তা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবেন না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ: দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই ভারতের সঙ্গে নতুন সমঝোতা স্মারক সই ও পুরনো সমঝোতা স্মারক নবায়ন করেছে।
বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে বিএনপির মন্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের পার্থক্য না বুঝে, না পড়েই মন্তব্য করছেন। কারণে-অকারণে সরকারের বিরোধিতা করাই তাদের কাজ।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে পারস্পরিক মর্যাদাপূর্ণ বলে অভিহিত করে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর প্রথম সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “ভারত আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত যেভাবে সহায়তা করেছে। তাদের সৈনিকেরা যেভাবে জীবন দিয়েছে, আমাদের প্রায় এক কোটি মানুষকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে, তাতে তাদের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তা অবিচ্ছেদ্য।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেনি। বিএনপিনেত্রী বেগম জিয়া নিজেই বলেছেন যে, তিনি ভারতে গিয়ে গঙ্গা চুক্তির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন আর ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গা চুক্তি করেছেন বিধায় আমরা পানি পাচ্ছি।”
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এর ফলে নেপাল থেকে ভারতের ওপর দিয়ে ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে পারছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়াও, ভুটানের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, দুই দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই এ বছর কোরবানির আগে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ভারত।
এ সময় ভারতের সঙ্গে ‘কানেকটিভিটি’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা রেল যোগাযোগ চালু আছে। ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানসহ আঞ্চলিক রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের নানা অঞ্চলের যোগাযোগ বহুদিন ধরে। ১৯৬৫ সালের পরে অনেক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে।”