বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, এবার দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী নিয়ে আসেন, তা দেখার জন্য দেশবাসী অপেক্ষা করছে।
“পণ্য পরিবহনের জন্য ভারত যদি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে রেলপথ নির্মাণ করে; তাহলে দেশের জনগণ তা কখনোই মেনে নেবে না;” ফারুক যোগ করেন।
শুক্রবার (২১ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন জয়নুল আবদিন ফারুক। বাংলাদেশের মাটিতে ভারত সরকারের রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জয়নুল আবদিন ফারুক আরো বলেন, এই সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ও উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাংলাদেশের জনগণ প্রমাণ করেছে যে তারা এই সরকারকে সমর্থন করে না।
ফারুক বলেন, আবার ভারত গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। “দেখা যাক এবার তিনি কী নিয়ে আসেন। তিনি যদি খালি হাতে ফিরে আসেন, জনগণ তাকে ক্ষমা করবে না। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে উঠবে;” আরো বলেন তিনি।
সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুক বলেন, বন্ধু হিসেবে ভারত বাংলাদেশের সবকিছু কেড়ে নিতে পারে না এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। “বাংলাদেশের মানুষ গরিব হতে পারে, কিন্তু আমাদের আত্মসম্মান অনেক বেশি। কাজেই আমি আপনাদের (ভারত) জানাতে চাই যে, বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে;” ফারুক আরো বলেন।
রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি, অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন ফারুক। তিনি বলেন, “এই সরকার লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের সরকার।”
আকস্মিক বন্যায় সিলেট অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে উল্লেখ করে ফারুক অভিযোগ করেন, সরকার এক ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য কিশোরগঞ্জ হাওর এলাকায় মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণ করেছে, যা আজ বন্যা ও অসংখ্য মানুষের পানিবন্দী হওয়ার কারণ।
এর আগে, গত ১৮ জুন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করতে, রেলপথে যোগাযোগ গড়ে তোলার ভারত সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়কাবাদী দল বিএনপি।
রবিবার (১৬ জুন) টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে বিদ্যমান রুটের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলপথের একটি বিকল্প নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে যাচ্ছে ভারত। এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ২১ জুন নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২২ জুন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনায় থাকতে পারে প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়।
সফর কর্মসূচির অংশ হিসেবে, ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। শুক্রবার ভারতের রাজধানী দিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পর, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “বাংলাদেশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও বিশ্বস্ত প্রতিবেশী। এই সফর দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আরো জোরদার করবে।”