বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাত থেকে দেশের বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে নদ-নদীর পানি। এদিকে, আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সারাদেশে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত ২০ লাখ মানুষ
ইউনিসেফ বলেছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যায় ইতোমধ্যে ২০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এ সব মানুষের মধ্যে ৭ লাখ ৭২ হাজারের বেশি শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ সংস্থাটি।
শুক্রবার (২১ জুন) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে ইউসিসেফ। বলেছে, সিলেট বিভাগে ৮১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া, ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর, প্রায় ১৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী
মৌলভীবাজারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার মানুষ। জেলার ৭ উপজেলার ৪৭ ইউনিয়নের ৪৭৪টি গ্রামের ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বন্যায় অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, ফসলের মাঠ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া অনেকে অবস্থান করছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, কুশিয়ারা-জুড়ী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ২০৫টি করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৬ হাজার ৫০০ মানুষ। জেলায় ৭০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।
সিলেটে বৃষ্টি থেমেছে
অতিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত সিলেটে প্রায় ৫ দিন পর, শুক্রবার (২১ জুন) সকালে রোদের দেখা পাওয়া গেছে। এদিকে, সিলেটের বেশ কয়েকটি নদ নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে কমেছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, শুক্রবার (২১ জুন) সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুধুমাত্র ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি দশমিক ১ সেন্টিমিটার বড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাট পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি আমলসীদ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৬১ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ১ দশমিক ২ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিলো ২০ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।
এর আগে গত তিন সপ্তাহে সিলেট নগরীতে অতিভারি বৃষ্টিতে পাঁচবার তলিয়েছে শতাধিক এলাকা। জলাবদ্ধতায় ভুগেছে নগরবাসী৷ পরে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সিলেটের সবগুলো উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়।
সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বৃষ্টি না থাকায় উন্নতির দিকে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায়, কমতে শুরু করেছে নদ-নদী ও হাওরের পানি। শহরের অধিকাংশ সড়ক ও বাসা বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে এখনো প্লাবিত হয়ে আছে শহর ও গ্রামের নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট।
ঈদের রাতে প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় জেলার বিভিন্ন এলাকা। পানি নামতে শুরু করায়, অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে এখনো দুর্ভোগে, হাওর বেষ্টিত অঞ্চলের হাজারো মানুষ। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি তাদের। খাবার সংকটের পাশাপাশি রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
কক্সবাজারে পাহাড়ধস
এদিকে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে, কক্সবাজারের সদর উপজেলায় পাহাড়ধসে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার(২০ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার পুলিশ লাইন বাদশা ঘোনা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পাহাড়ধসে নিহতরা হলেন, বাদশা ঘোনা এলাকার মসজিদের মোয়াজ্জিন আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাইমুনা আক্তার।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, ঝিলংঝা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। তিনি বলেন, টানা কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিলো। রাত ৩টার দিকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এসময় বাদশা ঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে একটি বসতঘরের ওপর পড়ে। ঘুমন্ত অবস্থায় মাটি চাপা পড়ে এই দম্পতি মারা গেছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ডাক্তার আশিকুর রহমান বলেন, পাহাড়ধসে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার শহরে বাদশা ঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে ঘুমন্ত স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
বৃষ্টির পূর্বাভাস
শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া দফতর আরো বলেছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি থেকে শক্তিশালী পর্যায়ে রয়েছে।