অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সেন্ট মার্টিনের নিরাপত্তা নিয়ে গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়েছে আইএসপিআর


সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ গুজব ছড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ গুজব ছড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে হওয়ায়, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্বীপটির নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ গুজব ছড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আর, এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হতে সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে।

রবিবার (১৬ জুন) প্রকাশিত আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে।

আইএসপিআর আরো বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির এই সংঘর্ষের কারণে নাফ নদী ও নদী সংলগ্ন মোহনা এলাকায় বাংলাদেশি জলযানের ওপর অনাকাঙ্খিত গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ১২ জুন প্রতিবাদ জানায়।

পরবর্তীতে মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে দেশটির সমুদ্রসীমা ও নাফ নদীর মিয়ানমার সীমায় অবস্থান গ্রহণ করে এবং তারা আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে। একই সঙ্গে, আরাকান আর্মি, মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ও জলযান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে, দেশটির নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ অভিযান পরিচালনা করছে। মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিনের কাছে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় অবস্থানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অবহিত করছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, মিয়ানমারের মূল ভূখন্ড এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় চলমান রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে; জানায় আইএসপিআর।

বিজিবির সদস্যদের তৎপর থাকার নির্দেশ

এদিকে, বাংলাদেশে-মিয়ানমার সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) সদস্যদের তৎপর থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায়, মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের তৎপর থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

রবিবার (১৬ জুন) বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমার সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এ নির্দেশ দেন।

মেজর জেনারেল সিদ্দিকী সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি দুর্গম দ্বীপে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য বিজিবি সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এছাড়া, বিজিবি মহাপরিচালক দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক বিষয়ে বিজিবি সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ

এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।

জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।

আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি। এই জোট ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ জোটের বরাত দিয়ে, অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, তারা ২৫০টির বেশি সামরিক চৌকি, পাঁচটি সরকারি সীমান্ত ক্রসিং এবং চীন সীমান্তের কাছে একটি বড় শহরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিলো আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

XS
SM
MD
LG