অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার এইটের লড়াইয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ


টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার এইটের লড়াইয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার এইটের লড়াইয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্ট গ্রেনাডাইনসের আর্নোস ভেল মাঠে বৃহস্পতিবার (১৩ জৃন) গ্রুপ 'ডি'র ম্যাচে লড়েছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। টি-টোয়েন্টিতে ১৬০ রানের লক্ষ্য খুব বেশি বড় না হলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২৫ রানের স্বস্তির জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সুপার এইটে ওঠার লড়াইয়ে এগিয়ে গেছে টাইগাররা।

রান তাড়ায় এদিন বেশ ভালো অবস্থানেই ছিল নেদারল্যান্ডস। দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ কয়েকবার ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে দেখা যায়। শুরুতে নেদারল্যান্ডসের পক্ষে তো কয়েক ওভার পর টাইগারদের দিকে। আবার মাঝে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটাররা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তো স্লগ ওভারে বাংলাদেশি বোলাররা ঝলক দেখিয়েছেন।

তবে শেষদিকে এসে নেদারল্যান্ডসের জন্য কঠিন হয়ে যায় সমীকরণ। শেষ ওভারে নেদারল্যান্ডসের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রানের। কিন্তু শেষ ওভারে ৭ রানের বেশি দেননি তাসকিন আহমেদ। এতে ২৫ রানের স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ হোসেন সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। এর মধ্যে পঞ্চদশ ওভারে তার জোড়া উইকেটই ম্যাচের মোড় বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এ ছাড়া, তাসকিন দুটি এবং মুস্তাফিজ, তানজিম সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ পেয়েছেন একটি করে উইকেট।

এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারেই আরিয়ানের বলে ১ রান করে আউট হন অধিনায়ক শান্ত। আরিয়ানের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি।

তৃতীয় ওভারে ভিভিয়ান কিংমাকে পিটিয়ে ১৮ রান তোলেন তানজিদ। কিন্তু পরের ওভারে আরিয়ানের প্রথম বলেই দারুণ এক ক্যাচে লিটন দাসকে সাজঘরে ফেরান এঙ্গেলব্রেখট। লিটনও ১ রান করে ফিরে গেলে ব্যাটিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। তানজিদকে নিয়ে তিনি সাবলীল খেলতে থাকেন। তবে নবম ওভারে তানজিদ ২৬ বলে ৩৫ রান করে আউট হয়ে গেলে ভাঙে ৪৮ রানের জুটি।

এরপর তৌহিদ হৃদয় এসেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পরে মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে এসে ব্যাট চালাতে থাকেন। ২১ বলে ২৬ রান করেন তিনি। শেষের দিকে জাকের আলী আর সাকিব মিলে সংগ্রহ বাড়িয়ে নেন।

নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তোলে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্র পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে জ্বলে উঠেছে সাকিবের ব্যাট। তাঁর অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসটি টাইগারদের সর্বোচ্চ। ৯টি চারের মাধ্যমে ৪৬ বলে এই রান করেন তিনি।

এ ছাড়া, ওপেনার তানজিদ তামিম ৩৫ ও মাহমুদউল্লাহ ২৫ রান করেন।

নেদারল্যান্ডসের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন আরিয়ান ও মিকেরেন।

১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরু করে নেদারল্যান্ডস। তবে পঞ্চম ওভারে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন। ওভারের দ্বিতীয় বলটি বাউন্সার দেন তিনি। মাইকেল লেভিট বলটি সুইপ করতে গেলে ওপরে উঠে যায়, আর পয়েন্ট অঞ্চল থেকে তা তালুবন্দী করেন তৌহিদ। এক ছক্কা ও দুটি চারে ১৬ বলে ১৮ রান করা লেভিট ফিরলে দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস।

পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে অপর ওপেনার ম্যাক্স ওডাউডকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে দেন তানজিম সাকিব। এরপর নেদারল্যান্ডসের রানের পালে হাওয়া দেন বিক্রমজিত সিং ও এঙ্গেলব্রেখট। কিন্তু দশম ওভারে বিক্রমজিত আউট হয়ে যান। ৩ ছক্কার সাহায্যে ১৬ বলে ২৬ করে তিনি যখন বিদায় নিচ্ছেন, তখন স্কোর ৯.৩ ওভারে ৬৯/৩।

এরপর অধিনায়ক এডওয়ার্ডস এসেও রানের চাকা সচল রাখেন।

অন্যদিকে, সিঙ্গেলস, ডাবলস, বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে রানরেট বাড়িয়েই চলেছিলেন এঙ্গেলব্রেখট ও এডওয়ার্ডস। কয়েক ওভারের মধ্যেই ম্যাচটি একপেশে করে ফেলার ইঙ্গিত দেন এই দুই ব্যাটার।

তবে পঞ্চদশ ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে দলকে পথ দেখান রিশাদ। ওই ওভারের চতুর্থ বলে এঙ্গেলব্রেখটকে ক্যাচ নেন তানজিম সাকিব এবং শেষ বলে নতুন ব্যাটার বাস ডি লিডকে স্ট্যাম্পিং করে দেন লিটন দাস। লিটনের স্ট্যাম্পিংটি ছিল দর্শনীয়।

এর ফলে ১১১ রানে চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস। কারণ পাঁচজন বোলার নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন স্কট এডওয়ার্ডস। অলরাউন্ডার না থাকায় বাংলাদেশি বোলারদের সামনে আর দাঁড়াতেই পারেননি পরবর্তী ব্যাটাররা।

ছয় রানের ব্যবধানে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে স্কট এডওয়ার্ডসের উইকেটটিও তুলে নেন মোস্তাফিজ। মূলত চাপে পড়েই মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে যান নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক। পরের ওভারের প্রথম বলে ভ্যান বিককে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন রিশাদ। ফলে ১১৭ রানে ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস।

এরপর আরিয়ান উইকেটে এসে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। শেষ ওভারে নেদারল্যান্ডসের দরকার ছিল ৩৩ রান। আরিয়ানের এক চারে ওই ওভারে ৭ রান সংগ্রহ করে নেদারল্যান্ডস। শেষ বলে টিম প্রিঙ্গলকে বোল্ড করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাঠ ছাড়েন তাসকিন-শান্তরা।

বাংলাদেশের জয়ে ‘ডি’ গ্রুপের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে শ্রীলঙ্কা।

সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তার এক ঘণ্টা পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামবে নেদারল্যান্ডস। সোমবারের ম্যাচে জয় পেলেই টাইগারদের সুপার এইটে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৯/৫ (তানজিদ ৩৫, শান্ত ১, লিটন ১, সাকিব ৬৪*, হৃদয় ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৫, জাকের ১৪*; কিংমা ০/২০, আরিয়ান ২/১৭, মিকেরেন ২/১৫, ফন বিক ০/৪৩, ডি লিডি ০/৩১, প্রিঙ্গল ১/২৬)।

নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (লেভিট ১৮, ও'ডাওড ১২, বিক্রমজিত ২৬, এঙ্গেলব্রেখট ৩৩, এডওয়ার্ডস ২৫, ডি লিডি ০, ফন বিক ২, প্রিঙ্গল ১, আরিয়ান ১৫*; মোস্তাফিজ ১/১২, তানজিম ১/২৩, তাসকিন ২/৩০, সাকিব ০/২৯, রিশাদ ৩/৩৩, মাহমুদউল্লাহ ১/৬)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ২৫ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।

XS
SM
MD
LG