সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আওয়ামী লীগের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, মিন্টুকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি অর্থদাতা নাকি হত্যাকাণ্ডে উসকানিদাতা তা খতিয়ে দেখবে কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, “শিমুল ভূঁইয়া ও গ্যাস বাবুর বক্তব্য থেকে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। এর ভিত্তিতে মিন্টুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। তাই আমরা তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। পরে আদালত মিন্টুর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।”
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কেন তাঁর প্রতিনিধি গ্যাস বাবু ঢাকায় আসার পর শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। “হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো আর্থিক লেনদেন হয়েছে কি না তা আমরা জানতে চাইব।”
১১ জুন (মঙ্গলবার) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে ওই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বৃহস্পতিবার তাঁকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ।
অন্যদিকে তাঁর আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য ১১ মে ভারতে গিয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার। ১২ মে তার বন্ধু গোপালের বাড়িতে যান। ১৪ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর ২২ মে তাঁর খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
কলকাতার অদূরে নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে তাঁকে (আনোয়ারুল আজিম) নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ২২ মে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এ ঘটনায় ২২ মে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের অভিযোগের ভিত্তিতে শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করা হয়।
'আনোয়ারুল হত্যার উদ্দেশ্য এখনো জানা যায়নি': ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বিদেশে অবস্থান করায় হত্যার মূল উদ্দেশ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
২৯ মে (বুধবার) ডিএমপি সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “এমপি আনার হত্যার পেছনে উদ্দেশ্য কী- এটি বাংলাদেশ পুলিশ বা ভারতীয় পুলিশ এখনো পর্যন্ত বের করতে করতে পারেনি।”
হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা গ্রেপ্তার হলেই উদ্দেশ্য জানা যাবে। পুলিশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, এমপি আনোয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত শাহীন এখন যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো বহিঃসমর্পণ চুক্তি নেই। তবে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্য
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
২৩ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
হাছান মাহমুদ জানান, ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, “আমাদের মিশন পুরো বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয়, তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়।”
এর আগে ২২ মে (বুধবার) কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, কলকাতার যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কলকাতা পুলিশ সেই ফ্ল্যাটে ঢুকে মরদেহ পায়নি।
তখন তিনি আরও বলেছিলেন, “আমরা আমাদের মিশনের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছি এবং মিশন থেকেও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এর বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও যোগাযোগ রাখছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্য
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ২৩ মে (বৃহস্পতিবার) বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমরা এখনো লাশ উদ্ধার করতে পারিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সবকিছু উদ্ধার করতে না পারছি, ততক্ষণ আমরা আপনাদের কোনো তথ্য দিতে পারব না। আবারও বলছি, উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে।”
তবে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরসহ প্রায় সবকিছু শনাক্ত করেছে বলে জানান তিনি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, “যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করার খুব কাছাকাছি আছি আমরা। শুধু ঘোষণা বাকি। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা একমত হলেই ঘোষণা দেওয়া হবে।”
আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা, ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করছে। আমরা নিশ্চিত যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে তাদের থেকে শুনেছি, তবে আমরা এখনো লাশ উদ্ধার করতে পারিনি।”
এ হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় কেউ জড়িত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভারতীয় জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিইনি। তদন্ত চলছে। কারা জড়িত তা কিন্তু আমরা এখনো বলিনি। আমরা বলেছি যে, আমাদের একটি সাধারণ ধারণা আছে। সেই ধারণার ভিত্তিতেই আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা নিয়ে কাজ করছি।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৩ মে (বৃহস্পতিবার) বলেছিলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের নিহত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না তা তদন্ত করে জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, “তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমি কিছু বলতে পারব না। আওয়ামী লীগে অপরাধীদের কোনো স্থান নেই।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, জনপ্রিয়তার কারণে ঝিনাইদহ-৪ আসনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। তাঁর মৃত্যুর পর এখন সেসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “অন্যায়কারী দলের লোক হলেও শেখ হাসিনা তাকে রেহাই দেন না। অপরাধের ব্যাপারে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলেন।”
এসব অভিযোগের সময় ও সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “(তাঁর) মৃত্যুর আগে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয় কেন আসেনি?”