বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, “দেশে বায়ুদূষণ বেশি হওয়ায় হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি হলে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।”
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান তিনি।
এদিন বিকেল ৪টায় অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জনস্বার্থে বায়ুদূষণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশে বায়ুদূষণ রোধে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশে ৬ হাজার ৮৭৬টি ইটভাটা
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডলের (খুলনা-১) প্রশ্নের জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, বর্তমানে দেশে ৬ হাজার ৮৭৬টি ইটভাটা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ বছরে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মোট ৩৩৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
অভিযানে ৪ হাজার ৪৩৬টি মামলা দায়ের, ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, ১১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ১ হাজার ১৮০টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান
দেশের প্রবৃদ্ধির ধারাকে টেকসই করতে পরিবেশ ও প্রকৃতির রক্ষায় গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘বাংলাদেশে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জন: একসাথে দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ও দূষণ রোধে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বে রোল মডেল, সবুজ প্রবৃদ্ধিতেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে। সবাই মিলে কাজ করে সবুজ বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন সেক্টরকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে। জিডিপি বাড়লেই হবে না, পরিবেশ ঠিক করতে হবে। দূষণ বেশি হলে প্রবৃদ্ধি হবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের দিকে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে, এক্ষেত্রে সরকার বেসরকারি সেক্টরকে প্রণোদনা দেবে। আসুন সবাই মিলে একটি সবুজ ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করি।”
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে। সরকার দেশের উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ডেল্টা প্লান, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ইত্যাদি বাস্তবায়ন করছে।
সেমিনারে গ্রিন গ্রোথ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এ সময় বক্তারা বাংলাদেশের সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং দেশের সবুজ প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মত বিনিময় করেন।
সেমিনারে আরও ছিলেন- সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম মাকসুদ কামাল, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম।
সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থা, গবেষক এবং পরিবেশবিদরা অংশ নেন।