বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
কমিশনের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বেনজীর আহমেদের ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ৮৩টি সম্পত্তির নথি জব্দ করার আবেদন করে দুদক।
এ বছরের ৩১ মার্চ একটি স্থানীয় দৈনিক ‘বেনজিরের বাড়িতে আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
১ ও ২ এপ্রিল আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে অনুরূপ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ফলে বেনজীর আহমেদ একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের মাধ্যমে দৃশ্যত বিপুল সম্পদের ওপর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
এরপর সাবেক আইজিপি বেনজীর ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগান রিটটি করেন। রিট আবেদনে অভিযোগের তদন্তও চাওয়া হয়েছে। বেনজীরের সম্পদের তদন্তে দুদকের নিষ্ক্রীয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদনও করা হয়েছে।
রিট আবেদনে দুদকের চেয়ারম্যান, দুদক কমিশনার ও দুদক সচিবকে বিবাদী করা হয়।
বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের কথিত দুর্নীতির তদন্তে ২২ এপ্রিল দুদক একটি কমিটি গঠন করে।
এরপর ২৩ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুই মাসের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এমপিও বেনজীরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ চেয়ে দুদকে আবেদন করেন।
সাবেক এ পুলিশ প্রধানের আইনজীবীরা আদালতের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চাইতে শুক্রবার (২৪ মে) সকালে আদালতে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, র্যাব ও বেনজীর আহমেদ
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।