বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার (২১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত, মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
“বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে। “আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই এবং তা অব্যাহত রাখবো;” আরো বলেন হাছান মাহমুদ।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ‘ডেসিগনেশন’ বা নিষেধাজ্ঞার ফলে, আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অযোগ্য হবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান,যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার ও অন্যান্য ইস্যুতে ২ দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। সাবেক সেনাপ্রধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রথমে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হয় বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি একজন সাবেক সেনাপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
মির্জা ফখরুল যা বললেন
বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খবরে খুশি না হতে দলীয় সহকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (২১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় এ আহবান জানান তিনি।
“অন্যের ওপর নির্ভর না করে, নিজের শক্তি দিয়েই বর্তমান সরকারকে পরাজিত করতে হবে;” বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
তিনি আরো বলেন, “নিজের ঘর নিজে সামলাতে না পারলে, অন্য কেউ এটা করে দেবে না। আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞায় অনেকেই খুশি হতে পারেন। আমি মনে করি এটি বিভ্রান্তিকর এবং আমরা সবসময় বিভ্রান্ত হচ্ছি।”
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে, র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো, কিন্তু বর্তমান সরকারের ভয়াবহ যাত্রা থামাতে পারেনি; বলেন মির্জা ফখরুল।
“আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজের শক্তি দিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নিজেদের শক্তি দিয়ে তাদের পরাজিত করতে হবে;” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির’ সাথে সম্পৃক্ততার কারণে ‘ডেসিগনেট’ করেছে, বা তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
“আজিজ আহমেদ সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, এবং তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কাজের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সহায়তা করেন,” সোমবার (২০ মে) এক বিবৃতিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ অন্যায় ভাবে সামরিক কন্ট্রাক্ট প্রদানে তার ভাইয়ের সাথে কাজ করেন এবং নিজ সুবিধার জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন।
“তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা দুর্বল করার জন্য অবদান রেখেছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলে, আজিজের ‘ডেসিগনেশন’ বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার আবারো ব্যক্ত করছে।
“যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকারি পরিষেবা আরো স্বচ্ছ, ব্যবসায়িক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থ পাচার সহ আর্থিক অপরাধ তদন্ত আর তার বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতি-বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন করে,” বিবৃতিতে বলা হয়।
এই ‘ডেসিগনেশন’ বা নিষেধাজ্ঞার ফলে, আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অযোগ্য হবেন।